Friday, May 31, 2024

সিরিয়াস বাবা

 আমাদের সিরিয়াস বাবা ঘরে ফিরতো রাত সাড়ে দশটায়। বাবা আসার আগ অবধি ঘর টা থাকতো আমাদের রাজ্য। যে যেমন মন চায় করতাম। উচ্চ স্বরে কথা বলা৷ হাসতে হাসতে খিল ধরতো ভাই বোন দের। মাও জোরেই চিল্লাচিল্লি করতো আমাদের।

বাবা ঘরে ঢুকতো সাড়ে দশটায়। সাথে বাজারের থলে। শীতকাল হলে নানা সবজি, ফুলকপি বেগুন, শীম। আর ছোট ছোট নানা রকমের মাছে একটা মিক্স মাছ আনতো। মাছটা মা কাঁচা মরিচ দিয়ে রান্না করতো অদ্ভুত এক সুঘ্রাণ আসতো। মোটা চালের ভাত টা অনায়সে গ্রো-গ্রাসে চলে যেত।
বাবা ঘরে ঢুকলে সব শান্ত হয়ে যেত। বাবা ঘরে ঢুকলে নাকে আসতো, বাবার গায়ে থাকতো তীব্র সিগারেটের গন্ধ। গলির মোড়েই খেয়ে আসত বাবা। আর সারাদিনের ক্লান্ত ঘাম। অদ্ভুত এক গন্ধ। আমার কাছে বাবার পরিচিত কিছু যদি থাকতো তা হলো বাবার সে গায়ের গন্ধ টা৷ সারাজীবনে এই গন্ধ টার মতো পরিচিত কিছুই হয় নি আমার আর।
ছোট থেকে দেখে আসা বাবা সস্তা সেই ডোরা কাটা, দাড়ি দাড়ি কয়েক টা শার্ট।যা কলার গুলো পরিস্কার করতে করতে রোজ প্রায় নরম হয়ে চামড়া উঠে গিয়েছিলো।
তিন টা ফরমাল প্যান্ট। বাবার জিনিস বলতে এইসবেই পরিচিত ছিল আমার।
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। যখন ক্লাস নাইনে উঠি তখন থেকে বাবাকে আমি এইভাবে খেয়াল করতে থাকি। বড় আপু,তার পর দুই ভাই, এরপর ছোট আপু আর এরপর আমি।
আমি বাবার কোলে উঠে আবদার করে পাশে বসেছি এমন কোন স্মৃতি আমার ছিলো না।
আমি মাঝেমধ্যে ভাইয়া আর আপুদের জিজ্ঞেস করতাম তোমার বাবার সাথে কখনো বসে আদর পাও নি?
ভাইয়া হাসতো, এইসব রূপকথার গল্প আসেও কেমনে তোর মাথায়?
বড় আপু রাবেয়া, ধমক দিতো।
-কেন করবে না? বাবা অফিস থেকে ফিরে প্রায় তো কোলে নিয়ে বসতো। তুই তো বাবার কোলে বসে থাকতি বাবার থাল থেকে একটা একটা ভাত খেতি। আর একবার তো বাবার কোলেই খাওয়ার সময় পটি করে দিয়েছিলি৷
বলতে বলতেই ওরা খিলখিল করে হাসে। রাবেয়া আপু আর রুবিয়া আপু।দুজনেই সারাদিন খিল খিল করে হাসে। তাদের ঢেউ ভাঙ্গা চুল গুলো সামনের দিকে চলে আসে। হাসতে হাসতে পেছন নিয়ে যায় এক হাতে অন্য হাতে উড়না টেনে আরেকটু গলার সাথে পেঁচায়।
ওদের মরিচা রঙের গায়ের রং, না ফর্সা না কালো। না সাদা না হলুদ এমন দাত গুলো বের হয়ে আসে।
আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি।
ভাইয়াদের সাথে কখনো সখনো খাওয়া হয়। তখন খুব মজা হয় আমাদের। সাব্বির ভাইয়া রুবিয়া আপুকে সারাক্ষন বিরক্ত করে। রাবেয়া আপু শান্ত হলেও রুবিয়া আপু ভীষণ মারকাটুরে।
কোন কথায় সে ফেলে না। কথায় না পারলে মাকে বিচার দেবে। মা তার মাথার উপর তোলা কানের পেছনে গুজে রাখা উড়নাটা খুলে আবার গুজে কানের দিকে। মায়ের সোনার বড় রিং কানের দুল টা নড়ে৷ মা হাল্কা চেঁচিয়ে বলবে,
- আহ, এত বড় ছেলে এইসব কি করিস খাওয়ার সময়?
ভাইয়ার এইসবে কিছু হয় না। রুবিয়া আপু উঠে ভাইয়ার পিঠে ধুম করে আবার কিল লাগায়।
ভাইয়া ওর চুল টেনে দেয়ে এঁটো হাতে। সে ফ্লোরে পা বারি দিয়ে কান্না করে। মেজ ভাইয়া আরেকটা বেনী টান দেয় এঁটো হাতে। মা বকতে গিয়ে হেসে দেয়। রুবিয়া আপু ভাত খাওয়ার সময় হাত ধোঁয়ার সময় যে গামলা টা দেওয়া হতো সবাই এঁটো ফেলতো সে গামলায় হাত ডুবিয়ে দুই হাত ওদের শার্টে মুছে দৌঁড় দিতো। ওর পাড়ার দোকান থেকে কেনা সস্তা নূপুর টা ঝুনঝুন করতো।
এইসব কোন কিছুই আমার বাবার দেখা হয় নি। এইসব মজার খাওয়ায় সময় টাতে আমি কখনো বাবাকে দেখি নি।
বাবা যখন বাড়ি ফিরতো আমাদের সবার প্রায় খাওয়া শেষ৷ সবাই একেবারে চুপচাপ। মাও ধীরে কথা বলতো। ধীরে হাটতো। আপুদের কথা গুলো ভলিউম বিহীন হতো।
বাবা যেদিকে থাকতো ভাইয়ারা সেদিকে পা দিতো না। বিরক্তি টেনে অন্য দিকে যেতো৷
মা বসে থাকতো। বাবার সাথে খেতে বসতো। মা ভাতের হাঁড়ির পাশে পিরা নিয়ে বসতো। আমাদের সেমি পাকা সিমেন্ট উঠে যাওয়া এ্যাশ কালারের ফ্লোরে একটা সাদা চালের বস্তা বিছানো থাকতো। বাবা মাদুরে বসতো। বাবার পাতে তরকারি তুলে দিতো মা । বাবা মায়ের সাথে হাল্কা কথা বলতো। আসলে মায়েই বলে যেত বাবা শুধু হু-হু করতো।
আমাদের সারাদিনের ফারমাশেয় যা মাকে বলে বলে আমরা বিরক্ত করে ফেলি, মা বিরক্তি নিয়ে চেঁচিয়ে উঠতো। সেগুলো মা আবার আস্তে আস্তে বলতো বাবাকে। কার স্কুলের বেতন দিতে হবে, কার টিউশনের ফি লাগবে,কার মডেল টেস্টের টাকা লাগবে, এইসব মা বলতো। কার জুতা লাগবে। নতুন ড্রেস লাগবে।
মা আস্তে আস্তে বলতো।
সামনে কারো বিয়ে থাকলে,কেউ বেড়াতে আসবে বললে।
মোট কথা সব খরচের একটা সামারি থাকতো, খুব সফট ভয়েসে।
প্রতিদিন বলতে পারতো না। কোন কোন দিন বাবা বিরক্তি নিয়ে, " আহ! " বলে উঠতো। সেদিন মা একেবারেই চুপ।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে আপুরা ইশারা করতো বলার জন্য। মা মাথা নাড়তো। চোখ বড় করে সড়ে যেত বলতো।
বেতন -ফি এইসব মাকে দিয়ে গেলেও। জুতা, শার্ট এইসবের জন্য বাবাকে দেখাতে হতো। আসলেই লাগবে কিনা?
বাবা খাবার শেষে এককাপ গরম দুধ খেত। তার সে বেতের চেয়ারে। পা তুলে বসতো। আমাদের যাদের যা লাগবে তা বাবার সামনে বলতে হতো৷
ব্যাগ বা স্যান্ডেল লাগলে তা ছিড়ে গেলে তা আগে দেখাতে হবে। বাবা যদি বলতো আরো কিছুদিন চলবে তাহলে আমাদের আর্জি সেখানেই শেষ হতো। মা চোখ টিপতো।
যার অর্থ, এখন যা। আমি দেখছি।
বাবা সকালে আটটায় বের হতো। বাবা বের হয়ে গেলে আবারো আমাদের ছন্দে চলতো ঘর। মায়ের হাকডাক। বোনেদের উচ্চস্বরে হাসি।
হঠাৎ আমার মনে হতো বাবা কি সারাজীবনেই এমন? আমাদের মতো মজা করা,হাসি তামশা, এইসব কি কিছুই ছিলো না বাবা? করতো না? বাবার কোন বন্ধুও ছিলো না?
একে একে বোনেদের বিয়ে হয়ে গেল।বোন দের বিয়েতেও বাবার কোন উচ্ছ্বাস ছিলো না। কেমন যেন সেই পরিচিত চিন্তিত আর গম্ভীর মুখ।
একটা পুরানো আয়রণ করা সুতি পাঞ্জাবিতেই বাবার বোনদের বিয়ে পার করে ফেলে। ক্লাবে আমরা যখন হাসিতে, খুশিতে, ছবিতে, নাচানাচিতে ছিলাম। বাবাকে ধরে আনা হয় রান্না ঘরে বাবুর্চির সাথে ঝগড়া করার সময়।
মায়ের সাথে সবার ছবি তোলার ধুম। বাবার কথা, বাবার সাথে ছবি তোলার কথা কারো মনেই নেই।
শুধু মা আলতো করে বলল,
- বিয়ে তো শেষ তোর বাবাকে একটা ছবি তোলার জন্য ডাক কেউ।
ভাইয়ারা বা বোন কেউ কোন আগ্রহ দেখাল না। মাও যেন আবার ভুলে গেল।
আমি ভয়ে ভয়ে গেলাম রান্নাঘরে।
বাবাকে ডাকলাম,
- মা ডাকছিলো, একটা ছবি তুলতে।
বাবা সাথে সাথে কোন উত্তর না দিলেও বাবুর্চিকে বকাবকি শেষ করে আমাকে আলতো করে বলল,
- বেশি ক্ষন থাকতে পারব না। ধুম করে লুকিয়ে ফেলবে জিনিস। চল।
বাবা স্টেজে উঠায় সবাই নেমে গেল। আপু ডেকে সবাইকে তুলল আবার।
সবার ছোট হওয়ায় বাবার রানের উপর আমাকে বসানো হলো। মা পাশে বসল। রুবিয়া আপু পেছনে দাড়াঁল ভাইয়ারা নিচে হাটু ভেঙে। যাতে সবাই এক ফ্রেমে সুন্দর করে আসে।
আমি ভয়ে ভয়ে বসেছিলাম। হঠাৎ বাবা আলতো করে ধরলো আমায়। পিঠে হাত বুলালেন।।আমি স্পর্শ করলাম প্রথম বার বাবার স্পর্শ ত্বকে নয় বুকের ভেতরে কোন একটা দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা লাগায়। কাঁপুনি ছুটায়।
এরপর সবাই আবার মেতে উঠলো মজায়। বাবা ফিরে গেল আবার রান্নাঘরে বাবুর্চি পাহারা দিতে।
সেদিন আমার প্রথম বার মনে হলো আমাদের বেড়ে উঠা, আমাদের জীবন, আমাদের পড়ালেখা, আমাদের এই আনন্দ, নতুন জামা। সব তো বাবার টাকায়৷ বাবার জন্য৷
কিন্তু আমাদের আনন্দে কোন ভাগীদারেই যেন তিনি নেই। তিনি নন।
এক বুক হাহাকার সেদিন বুকে জেগে উঠেছিলো বলে আমি বোধহয় শেষ অবধি ছাড়তে পারি নি বাবাকে। কি যেন একটা উলের কাটার মতো ফুটতো৷
আপুদের বিয়ে হয়ে গেল। ভাইয়ারা কেউ সিলেট কেউ কক্সবাজার চলে গেল চাকরি নিয়ে। বিয়ে করে যে যার বউ নিয়ে।
আমাদের ঘর আবার ঠান্ডা আর নিশ্চুপ হয়ে গেল। কিন্তু সেটা বাবার জন্য না। তখন সবে আমার ইন্টার শেষ করে ভার্সিটি লাইফ শুরু হচ্ছিল। বাবা রিটায়ার্ড হলো।
বাবার আর ফেরার টাইম নেই। বাবা ঢুকলে সব থমকে যাচ্ছে না। বোনেরা ভাইয়েরা এলে প্রথম প্রথম আগের মতো বাবার সামনে চুপ থাকার চেষ্টা করলেও ধীরে ধীরে সব কমতে শুরু করলো।
''বাবা আছে, তো কি হয়েছে?'' সবার মধ্যে এমন একটা ভাব আসা শুরু করলো।
আমাদের কথাবার্তা।হাসি মজা করা বাবা দূর থেকে অবাক চোখে দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেল৷
আমরাও অভ্যস্ত হয়ে গেলাম বাবার থাকাটা।
বাবার নিস্পৃহ চাহনী ভেজা শমুকের মতো ধীর হতে লাগলো৷
আমি বাবার সে দাপট চলা কে মিস করতে করতে এক সময় সেটা মায়ায় পরিণত হলো৷ তখন আমিই শুধু বাবাকে আগের মতো সম্মান দিয়ে চলতাম।
বাবা ধীরে ধীরে মিশতে চাইছিলো আমাদের জগতে৷ যে জগতে যিনি কোন কালেই ছিলেন না। তিনি ছিলো রাত সাড়ে দশ টা থেকে সকাল আটটার একজন অথিতি মাত্র।।যাকে সবাই ভয় পেতাম। মাও এখন ভয় পায় না। আমাদের বাসা চেঞ্জ হলো। সেই স্যাতস্যাতে ফ্লোরে এখন চকচকে। মা আর কাজ করে না। কাজের মেয়ে একটা আছে।যাকে তদরাকি করা আর ওর না পারার কাজের ফর্দ শোনায় মূল জীবনে পরিণত হয়েছে।
আমরা এখনো আমাদের সিরিয়াস বাবাকে কোন প্লানে ইনভলব করতে ভুলে যায়। ভাইয়েরা বোনেরা বাড়িতে এলে পার্কে ঘুরতে যাওয়া প্লান হয়। সবাই যখন ঘুরে এলাম মা সহ। বাবা পাড়ার দোকান থেকে ফিরে এসে বলল,
-কোথায় গিয়েছিলে সবাই?
- পার্কে!
বাবা তার চামড়ার জুতো গুলো দরজার পাশে দেওয়ালে হাতের হেলান দিয়ে খুলতে খুলতে বলে,
- কই বললি না তো কেউ। আমাকেও বলতি, আমিও ঘুরে আসতাম।
মা বলে উঠলো, তুমি যাবে না তাই।
বাবা ' ও' বলে তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে ছোট মোবাইল টা শোকেসের পাশে রেখে ভেতরে চলে গেল।
আমরা খেয়াল করলাম, বাবা যাবে না এইটা আমরা এমন ভাবে গেঁথে নিয়েছি বাবাকে যাওয়ার জন্য বলার কথা কারো মাথায় এলো না। কারণ বাবা যে আমাদের সিরিয়াস বাবা।
যার এই সংসারে অথিতি হওয়াটা আমাদের জন্যেই ছিলো। সকালে বের হতে রাতে ফিরতো বলে নির্ধিদায় বোনেদের বিয়ে হয়েছে আর পূরণ হয়েছে সব ভাইয়ের পরীক্ষার ফরম।
তারপর একদিন কোন কারণ ছাড়া মা মারা গেল। সবাই বলতে লাগল, আহারে সুখের সময় মরে গেল।
আমি ভাবতাম, মা কি অসুখী ছিলো?
আমাদের পাঁচ ভাইবোন নিয়ে। বাবাকে নিচু স্বরে আমাদের ফরমায়েশ গুলো দেওয়াতে তো মা সংসার খুঁজে নিয়েছিলো৷ মা তো অসুখী ছিলো না৷ মা তার সন্তানদের আদর পেয়েছি। তার সন্তান দের দুনিয়ায় বিশাল একটা জায়গা নিয়ে রেখেছিলো। মায়ের সাথে আলোচনা হতো, তর্ক হতো, সিদ্ধান্ত হতো।
মা জিতে গিয়েছিল। এই ক্ষেত্রে হেরে গিয়েছিল বাবা। কারো দুনিয়ায় কোন জায়গা করতে না পেরে।
আমি আর বাবাই রয়ে গেলাম বাসায়। বাবার পাশে গিয়ে বসে গল্প করা, হাসতে হাসতে খেলা দেখা, সারাদিন কি করেছি এসে বলার ছোটবেলার তীব্র ইচ্ছাটা তখনো কেমন যেন তুষের আগুনের মতো জ্বলতো।
কিন্তু, খাবার খেয়েছেন? আর ওষুধ খেয়েছেন? ওষুধ লাগলে বলিয়েন। এই চক্রে আমি আটকে গেলাম। কোন দ্বার আমি ভাঙ্গতে পারছিলাম না।
একদিন বন্ধুদের সাথে খেলা না দেখে ফিরে এলাম ঘরে। টিভি ছেড়ে বাবাকে ডাকলাম,
- খেলা দেখবেন?
বাবা এক গাল হেসে,
- দেয়, দেখি।
বলে পাশে এসে বসলো।
কাজের মেয়েটাকে বলে মুড়ি মাখিয়ে নিলাম। বাবার সাথে এই বাটি থেকে খাবো ভাবতে পারি নি কখনো।
খেলার উত্তেজনায় যখন চিৎকার করে উঠি, ভয়ে আবার চুপ হয়ে যায়।
বাবা কোন কথা বলে না। যেন খুশিই হয়।
ধীরে ধীরে আমার সিরিয়াস বাবা আমাদের খেলা দেখার পার্টনার হয়ে যায়।
দুজনে চিৎকার করে উঠি। আমার ভয় কাটে৷ বাবার স্পর্শ পেলে আর কেঁপে উঠি না। দুইজন দুইদলের হয়ে ঝগড়া করি।
আমার কাছে যা রূপকথার গল্পের চেয়ে কম নয়।
অফিসে সবাইকে পিজ্জা দেওয়া হয়। আমার টা বাসায় নিয়ে আসি। খেলা দেখার সময় আমি বের করে খেতে নিই। বাবাকে বলি, খাবেন?
বাবা অবাক চোখে বলে,।
-এইটা কি জিনিস, দেয় খেয়ে দেখি।
খেয়ে বলল।
- মজা তো। আগে তো খাই নি।
আমি অবাক হলাম, আমরা ভাই বোনেরা পিজ্জা খেয়েছি অনেক আগে থেকে। মাও খেতো৷ কিন্তু বাবা ফেরার আগে। আশ্চর্য কখনো বাবাকে খাওয়ানো হয় নি। কারণ বাবা তো আমাদের সিরিয়াস বাবা ছিলো৷ আমার বুকে আবার ফুটলো উলের কাটা।
একটা লেদার জ্যাকেট কিনে আনলাম। বাবাকে দেখালাম। বেশ গম্ভীর গলায় বাবা সব দিকে ঘুরিয়ে দেখে বলল,
-দাম কত নিলো?
দাম বলার পর অবাক স্বরে তাকিয়ে বলল,
-এত টাকা দিয়ে এইসব কেনার সাহস হয় কি করে তোদের?
আমি জানি আমাদের সবার সিনিয়াস বাবা কাপড় চোপড়ের মতো তুচ্ছ জিনিসে খরচ করার সাহস করতো না।
বাবা তারপর হাতে দিয়ে বলল, তবে ঠান্ডা লাগবে না। বাইক চালাস তো। আমি তো শীতের সময় যখন ফিরতাম বুকের উপর শক্ত ঢাল দিতাম ঠান্ডা না লাগার জন্য।
আমি জানি,সে কথা। তবে আর উচ্চারণ করলাম না। সাহস হলো না৷ বাবার হাতে জ্যাকেট টা দিয়ে আলতো করে বললাম,
-এইটা আপনার জন্য। পরে দেখেন। ফিটিং হয় কিনা? না হলে চেঞ্জ করে আনব।
বাবা অবাক চোখে তাকালেন আবার৷ অবিশ্বাস্য চোখে। বিশ্বাস হচ্ছে না উনার।
আমি একটু জোরেই বললাম, পরে দেখেন নইলে চেঞ্জ করে আনি৷
উনি পরে দেখলেন।
ড্রয়িং রুমে আয়না আছে তাও উনি বেশ তাড়াতাড়ি করে উনার রুমের দিকে যেতে যেতে বললেন,
-দাঁড়া আয়না দেখে আসি।
তখন না বুঝলেও পরে বুঝেছি। বাবা কেন পালিয়ে গেল সামনে থেকে।অনেকক্ষন পর স্বাভাবিক হয়ে ফিরে বলল,
- কত্ত আরাম রে খোকা এইটা। ভেতরে পুরো গরম উম।
বাবা নাকি ছোট বেলায় আমায় খোকা ডাকতো। বুদ্ধির পর এই প্রথম শুনলাম।
বাবাকে বললাম,
-চলেন আজ বাইকে করে ঘুরে আসি।
বাবা যেন চোখেমুখে বাচ্চাদের উচ্ছ্বাস দেখালো আমায়। বাবা সারাজীবন বাইক চালিয়েছে। বাবাকে প্রথম বাইকের পেছনে বসাতে ভয়েই লাগছিলো আমার।
বাবা আমার পেছনে বসলেই আমি দূরত্বে ছিলাম। হঠাৎ কাঁধে হাত দিয়ে ধরল বাবা। সেই বুকের দেওয়ালে ধাক্কা দেওয়ার মতো অনুভূতি টা। বাবা ধীরে আমার পিঠ ঘেঁসে বসলো।
কাঁপা স্বরে বাবা বলে উঠলো,
-তোকে কখনো আমার বাইকের পেছনে বসিয়ে ঘুরতে নিই নি, তাই না রে খোকা?
আমি জানি না কি ছিলো সে কথায়। অঝোরে ঝড়ছিল আমার চোখ বেয়ে পানি। রাস্তার তীব্র ঠান্ডা বাতাস সে কান্নায় বাতাস লাগিয়ে শীতল করছিল চেহেরাটা যেন জমে যাচ্ছে বরফ, উড়ে যাচ্ছে পানি গুলো।
হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার পেছনে ঘাড়ের দিকে কিছু অংশের শার্টটা কেমন যেন ভেজা ভেজা লাগছে।
আমি নিঃশব্দে বাবার মনের শব্দ গুলো শুনছিলাম। যেসব বাবারা সন্তানের জীবন বানাতে নিজের জীবন হারিয়ে হয়ে যায় সিরিয়াস বাবা।

source: https://www.facebook.com/61555758508424/posts/122126293706191950/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

No comments:

Post a Comment

বল্টু

  ●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...