Just a Story
- "চাচা, আমাকে এক প্লেট চিকেন বিরিয়ানি দেন।"
আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে কিছুটা থমকে যায় বিরিয়ানি বিক্রেতা রজব মিয়া। গায়ে দামী শার্ট প্যান্ট, শার্টটা সিনেমার নায়কদের মতো সুন্দর করে কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করে রাখা। হাতের ঘড়িটা যে অনেক দামী সেটা তার চেহারায় বলে দিচ্ছে।
এমন বড়লোক কাস্টমার তো তার দোকানে আসে না। এসব মানুষ যায় বড় বড় নাম করা রেস্টুরেন্টে, যেখানে লাল নীল বাতি জ্বলে। রেস্টুরেন্টের সামনে থাকে পুলিশের মতো কাপড় পরা দারোয়ান। তার মতো লোক সামনে গেলেই বলে- "হট যাও"।
যাক, রজব আলীর এতো চিন্তার কী কাম। কাস্টমার এসেছে তার কাজ হলো খাবার দেয়া। খাবে, বিল দেবে- খেল খতম। তবুও দামী জিনিসের কদর আলাদা। ভ্রাম্যমান ভ্যানে করে বড় একটা ডেগে বিরিয়ানী বেঁচে রজব। ভ্যানের উপরে বড় করে লেখা- "বাসমতী চালের চিকেন বিরিয়ানি"।
ডেগটা লাল কাপড় দিয়ে সুন্দর করে মুড়ে দেয়া। এর মাহাত্ম্য অবশ্য রজব আলী জানে না। সবাই দেয়, তাই সেও দিয়ে রাখে।
সাহেব লোকটাকে দেখে তার ছোকরা কর্মচারী ছেলেটাও বেশ তৎপর হয়ে গেছে। গলায় ঝুলানো মলিন ময়লা গামছাটা দিয়ে ভ্যানের সামনে রাখা প্লাস্টিকের টুলের মধ্যে সবচেয়ে ভালোটা, ভালো করে মুছে বসতে দেয়।
লোকটা আরাম করে বসে। তরুণই বলা যায়, অল্পই বয়স। অবশ্য এসব মানুষের বয়স ধরা কঠিন। চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে গায়ে ধুলা ময়লা লাগে না।
রজব আলী ব্যস্ত হাতে ধোয়া মেলামাইনের প্লেটটা আবার ধোয়। ডেগের যে পাশে এখনো হাত পড়ে নি সেখান থেকে গরম বিরিয়ানি বেড়ে দেয়।
রজব আলী যতোই ভাবুক কাস্টমার তো কাস্টোমার সে যেমনই হোক, কিন্তু কৌতুহলী দৃষ্টি দেয়া থেকে নিজেকে সামলাতে পারে না। আর কেবল বিকাল হচ্ছে, পার্কের এদিকটায় এখনো লোকজন তেমন আসে নি। বেঁচা বিক্রি সেভাবে শুরুও হয় নি।
এক সময় রজব আলীর এই বিরিয়ানি নামকরা ছিলো। দুপুরের পর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত লোকজন লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে কিনতো। কিন্তু এখন দোকানের সংখ্যা বেড়ে গেছে, নিত্য নতুন রঙের ঢং এর রেস্টুরেন্ট হয়ে রজব আলির সে দিন আর নেই।
- "বুঝলেন চাচা, আপনার এই বিরিয়ানি খাওয়া আমার এক সময় স্বপ্ন ছিলো।"
- "বাবা আমি কী বলচেন, আমি ঠিক বুঝবার পারছি না।"
- "না বোঝারই কথা চাচা। আমি বুঝতে পারছি আপনি আমার দিকে ঘন ঘন তাকাচ্ছেন। পাশে পার্ক করা গাড়ি দেখছেন। ভাবছেন আপনার এই সস্তার দোকানে কেন খেতে এসেছি।
জানেন চাচা, আমার তখন পড়ালেখা শেষ হয় নি। পেটে তীব্র খিদে, পকেট শূণ্য আর চোখে চরম হতাশা। বাপ মা মরা এতীম আমি। সব হারালেও পড়ালেখাটা কিভাবে যেন ধরে রেখেছিলাম। খাওয়া খরচ জুটাতে কি না করেছি। পত্রিকার হকার দিয়ে শুরু। মানুষের পত্রিকা পড়া এক সময় কমে গেলো আর অনলাইনে অর্ডার দেয়া বাড়লো। তখন ডেলিভারিম্যানের কাজ করেছি। রোদ নেই, বৃষ্টি নেই ভারী একটা ব্যাগ পিঠে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি।
এমনই এক গরমের বিকেলে ক্লান্ত হয়ে পার্কের বেঞ্চে বসেছিলাম। দুপুরে খাওয়া হয় নি। খালি পেটে পানি পড়তে পেটে আরো মোচড় দিলো। তখন চোখে পড়েছিলো আপনার খাবারের ভ্যান - বাসমতী চালের চিকেন বিরিয়ানি।
পকেটে হাত দিয়ে দেখি মাত্র ২০ টাকা পড়ে আছে। কিন্তু মনটা আনচান করছে এক প্লেট চিকেন বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য। আপনার দোকানের সামনে এসে একটা টুল নিয়ে বসলাম কিন্তু অর্ডার আর করি না। করবো কিভাবে, টাকা তো আর নেই পকেটে। এক সময় আপনার কর্মচারী টের পেয়ে গেলো যে আমি খাবার অর্ডার না করে একটা টুল দখল করে বসে আছি।
আমার উপর খেঁকিয়ে উঠলো। আপনি তখন কাস্টমার সামলাতে ব্যস্ত। তবুও জোরে চিৎকার করে কথার শব্দ শুনে জানতে চাইলেন কী হয়েছে। কর্মচারী ছেলেটা বললো আমি কিছু অর্ডার করছি না আবার একটা টুল দখল করে বসে আছি। আপনি বলেছিলেন
- "ঐ মিয়া , একটা টুলেই না বয়েছে, তর ভিটায় তো বসে নাই। কেলান্তো হয়্যা গেছে, বসবার দে।"
এরপর আরো প্রায় আধা ঘন্টা পরে ছেলেটা আবারো চিল্লায় উঠে বললো আমি এখনো সিট ছাড়ি নাই।
আপনি ভ্যানের পেছন থেকে সামনে চলে আসলেন। এক প্লেট চিকেন বিরিয়ানি আমার হাতে দিয়ে খুব আমার চোখের দিকে তাকিয়ে খুব আস্তে আস্তে বললেন
- "আব্বার মনে অয় খুব খিদা লাগছে। নাও বাজার খাও। আরেকদিন টাকা দিও।"
আমি আপনার সে টাকা আজো দিতে পারি নাই চাচা। আমার সাহস হয় নাই। এক প্লেট চিকেন বিরিয়ানির দাম শোধ করার মতো সাধ্য আমার বুঝি কোনদিনই হবে না!"
বিরিয়ানির প্লেট হাতে কাঁদছে আগন্তুক ছেলেটি। রজব আলীরও চোখ ভিজে উঠেছে নাম না জানা ছেলেটির কষ্টে। বুঝতে পারছেন না কি বলবেন। ছেলেটা খুব তৃপ্তি করে খেয়ে বললো -
-"আপনার খাবারের দাম দিতে পারবো না চাচা। কিন্তু আব্বা বলে ডেকেছিলেন। আজ আপনার আব্বার সামর্থ আছে, সে চায় না এই বয়সে আপনি আর কষ্ট করুন। এখন থেকে আপনার সব দায়িত্ব আমার।"
- "তুমি কয়েচো, আমি খুশি হইছি বাজান। কিন্তু এ কাজ তো আমি ছাড়তি পারবো না বাপ। তুমার মতো আরেকজন রে আমি খাওয়াতি পারলি তয় আমি খুব খুশি।"
আগন্তুক রজব আলিকে রাজী করাতে পারে না, বিরিয়ানির দাম আজো দিতে পারে না। ধীর পায়ে তার দামী গাড়িতে উঠে যায়, পেছনে রেখে যায় এর চেয়ে বহুগুণ দামী একজন মানুষকে।
সমাপ্ত
বাসমতী চালের চিকেন বিরিয়ানি
ইয়াসমিন নাহার
source>> https://www.facebook.com/profile.php?id=100083980421597
Subscribe to:
Posts (Atom)
বল্টু
●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...
-
was gehört zusammen >> what belongs together wie heißen diese Wörter in Ihrer Sprache? >> what are these words called in your ...
-
মা এখনও অংক বোঝেনা! ১ টা রুটি চাইলে ২ টা নিয়ে আসে। কোথাও যাওয়ার সময় ২০ টাকা চাইলে ৫০ টাকা পকেটে ঢুকিয়ে দেয়। মা ইংরেজিও বোঝে না! I hate u ...
-
ছেলেরা আকার ইঙ্গিতে আমায় বৃদ্ধাশ্রমের কথা বলে। বিষয়টা এতদিন না বুঝলেও এখন ঠিকই বুঝি। গতরাতে বড় ছেলে এসে বললোঃ বাবা তোমার একা একা এভাবে সার...
No comments:
Post a Comment