সাড়ে সাত বছরের মাথায় চাকুরি থেকে অবসরে যাবো। সবাইকে যেতে হয়। কিন্তু আমি নিজেই তা মনে রাখি না। ভাবি সারাজীবনের জন্য এ পদ-পদবি আমাকে লিখে দেওয়া হয়েছে। তাই আমার মাটিতে পা পড়ে না। চোখ থাকে লাল, সব জায়গায় খালি ‘ভি আই পি' ব্যবস্থা খুঁজি।
কিন্তু রিটায়ারের পর চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে এতদিন যা আমাকে 'লেখাপড়া' করে দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ভেবেছি সব উধাও হয়ে যায়।
এভরিথিং ডিসঅ্যাপেয়ারস! জাস্ট ভ্যানিশেস!
আমি তো কোন ছাড়, আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের অফিস ছাড়ার পরের অভিজ্ঞতা বলি।
১। ২১ জানুয়ারি, ১৯৮১ সাল।
জিমি কার্টার হোয়াইট হাউজ ছেড়ে জর্জিয়ায় নিজের বাড়িতে ফিরে গেলেন। গিয়ে দেখেন দীর্ঘদিন দেখভাল না করায় বাড়ির অবস্থা খুবই বেহাল। প্রায় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। তিনি পাশ ফিরে তাঁর সহকারীকে ব্যবস্থা নিতে বলতে গিয়ে দেখলেন কোথাও কেউ নেই। ডানেও নেই, বামেও নেই। যা করার তাঁকে একাই করতে হবে। প্রেসিডেন্টকে বাড়িটি ঠিক করার লোকজন নিজেকেই জোগাড় করতে হলো।
২। ২১ জানুয়ারি, ১৯৮৯ সাল।
প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ওভাল প্রেসিডেন্সি ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজের অবকাশ কেন্দ্র র্যাঞ্চ ডেল সিলিওতে ফিরে গেলেন। পরদিন তিনি র্যাঞ্চ ঘুরে দেখবেন। বাইরে বেরিয়ে তিনি গাড়ির পেছনের সিটে বসলেন। কিছুক্ষণ কেটে গেলো কিন্তু গাড়ি চলছে না। তিনি বিরক্ত হয়ে ভাবলেন, ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে না কেন? তারপরই তাঁর মনে পড়লো, তিনি এখন আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নেই, তাই র্যাঞ্চে গাড়ি চালানোর জন্য ড্রাইভারও নেই। এখন থেকে অবকাশে এলে গাড়ি নিজেকেই চালাতে হবে। পাবলিক প্রোগ্রামে গেলে তিনি একজন ড্রাইভার পেতে পারেন, কিন্তু ব্যক্তিগত অবকাশে নয়, অথচ চব্বিশ ঘন্টা আগেও কত লোকলস্কর তাঁকে ঘিরে থাকতো।
৩। ২১ জানুয়ারি,২০০১ সাল।
প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন বাড়ি থেকে বের হয়ে অবাক হলেন, ‘ Hail to the Chief' এ গানটি বাজছে না কেন? নিয়ম হচ্ছে মার্কিন রাষ্ট্রপতি কোথাও উপস্থিত হলে এ গান বাজানো হবে। তিনি অবাক হয়ে এদিকওদিক তাকালেন। কী ব্যাপার? সব চুপচাপ! পর মুহূর্তে তাঁর মনে পড়লো, তিনি এখন আর প্রেসিডেন্ট নেই। ‘ Hail to the Chief' গানটি এখন অন্য কারো জন্য বাজানো হবে, তাঁর জন্য নয়।
৪। ২১ জানুয়ারি, ২০০৯ সাল।
প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বেড রুমে কফির অপেক্ষা করছেন। ঘুম থেকে উঠে কড়া এক কাপ কফি পান করা তাঁর পুরানো অভ্যেস। কিন্তু কফি আসছে না, তাঁর মেজাজ খারাপ হতে লাগলো। রেগেমেগে বেল টিপবেন, দেখেন বেলই নেই। ঠিক সে মুহূর্তে কফির পেয়ালা ট্রেতে নিয়ে রুমে ঢুকলেন তাঁর স্ত্রী লরা বুশ। প্রেসিডেন্টের মগজে ধাক্কা খেলো একটি কঠিন সত্য, তাহলো আর কোনোদিন হোয়াইট হাইজের কিচেন থেকে তাঁর জন্য কফি আসবে না। তা নিজে বানিয়ে খেতে হবে, বা লরা তা বানিয়ে দেবেন।
৫। ২১ জানুয়ারি, ২০১৭।
মিশেল ওবামা সন্ধ্যার হালকা ডিনারের জন্য অপেক্ষা করছেন। ডিনার এলো না। তাঁর অস্বস্তি হচ্ছে, কী হলো? এমন সময় সামনে দুলতে থাকা অপরিচিত জানালার পর্দা মনে করিয়ে দিলো, তিনি এখন ওয়াশিংটনের সাদা বাড়িতে নেই। এটা তাঁর নতুন বাড়ি, এবং তা প্রেসিডেন্টের বাড়ি নয়। তাঁর ডিনার তাঁকেই তৈরি করতে হবে। তিনি হেঁটে গিয়ে ফ্রিজ থেকে স্যান্ডউইচ বের করে তা ওভেনে গরম করতে দিলেন। তখনো আট চল্লিশ ঘন্টাও পার হয়নি তাঁর স্বামী বারাক ওবামা প্রেসিডেন্সি থেকে বিদায় নিয়েছেন।
এই হচ্ছে, দুনিয়ার সবচে ক্ষমতাবানদের রিটায়ার করার পরের অবস্থা।
তাহলে আমার কী হবে?
আমরা যারা আজকের দিনটিকে ‘চিরদিন’ ভাবি তাদের জন্য 'রিটায়ারমেন্ট' খুবই মর্মান্তিক হবে কোনো সন্দেহ নেই।
পাদটীকা: ১.সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টরা কিছু সুবিধা পান, যেমন পেনশন, নিরাপত্তা,অফিস নিলে তার সামান্য খরচ ও কয়েকজন স্টাফ, (হাউজ স্টাফ নন) এবং পাবলিকলি চলাফেরার জন্য ড্রাইভার, কিন্তু এসব ক্ষমতার সু্যোগ সুবিধার তুলনায় নস্যি।
২. প্রতিটি তথ্য বইপত্র এবং অথেনটিক অনলাইন সোর্স থেকে নেওয়া
source: https://www.facebook.com/groups/905458924023335/permalink/985724082663485/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
No comments:
Post a Comment