Friday, May 31, 2024

নিম গাছ

 “একুশ শতকের বৃক্ষ” নিম গাছ পরিবেশগত ভাবে খুবই উপকারী। নিমের ইংরেজি নাম Neem, বৈজ্ঞানিক বা উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Azadirachta indica A.Juss. (অ্যাজাডিরাকটা ইনডিকা), পরিবার Meliaceae। নিমকে নিম্ব, ভেপা, তামার আরও আরও অনেক নামে ডাকা হয়। নিমের পাতা থেকে বাকল, শিকড় থেকে ফুল, ফল থেকে বীজ সবগুলোই আবশ্যকীয়ভাবে কাজে লাগে। যেখানে বৃষ্টি কম সেখানেও নিম খুব ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় যার প্রমাণ সৌদি আরবের পবিত্র নগরীর আরাফাতের ময়দান।

নিম গাছ অতি উচ্চ মাত্রার দূষণ সহ্য করতে পারে এবং শুষ্ক মৌসুমে পাতা পড়ে গেলেও সেগুলোতে তাড়াতাড়ি নতুন পাতা চলে আসে। নিম অন্যান্য গাছের চেয়ে ৫ গুন বেশী ধুলা ও ধুয়া শোষণ করতে পারে, নিম গাছের পাতা বেশি পরিমাণে সীসা শোষণ করে। ধূলিকণা, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার অক্সাইড এবং নাইট্রোজেনের মতো দূষক শোষণ করার ক্ষমতা নিম গাছের রয়েছে।
ভারত উপমহাদেশে নিম নিয়ে গবেষণা শুরু হয় ১৯৪২ সালে। পশ্চিমা বিশ্বে গবেষণা শুরু হয়েছে আরও অনেক পরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিম নিয়ে গবেষণা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যে নিম নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। নিমের ব্যবহার, এর চাষাবাদ নিয়ে মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। ১৯৯৬ সালে ভারতের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট দ্বারা করা নতুন দিল্লির বিভিন্ন স্থানের একটি সমীক্ষা ইঙ্গিত দেয় যে নিম গাছ শিল্প এলাকায় ও শহুরে দূষণ দূর করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত প্রজাতিগুলির মধ্যে একটি এবং এটি পরিচিত হট স্পটগুলিতে সবুজ বেল্টের মত কাজ কর। উচ্চ বায়ু দূষণের জন্য ইতিহাস থেকে জানা যায় সম্রাট অশোক, খ্রিস্টের পূর্বে ৩য় শতাব্দীতে, নিমকে অন্যান্য বহুবর্ষজীবী, টেমারিন্ডাস ইন্ডিকা এবং মধুকা লাতিফোলিয়ার সাথে রাস্তার হাইওয়ে এবং রাস্তার ধারে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
নিমের কার্বন ডাই-অক্সাইড ফিক্সেশন করার ক্ষমতা অন্যান্য গাছের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি। এটি প্রতি সেকেন্ডে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ১৪ টি মাইক্রোমোল ( প্রতি বর্গ মিটার) ঠিক করতে পারে। নিম গাছের পত্র পৃষ্ট সর্বাধিক কার্বন ডাই-অক্সাইড ফিক্স করার জন্য একটি ভাল বিকল্প হিসেবে কাজ করে এবং অন্যান্য দূষণ উপাদানগুলির বিরুদ্ধে একটি ঢাল প্রদান করে বিশেষ করে সালফার ডাই-অক্সাইড।
গাছ সাধারণত দিনের বেলায় অক্সিজেন ছাড়ে আর রাতে ছাড়ে কার্বন ডাই অক্সাইড। কিন্তু প্রকৃতির এই নিয়ম মেনে চলে না এমন গাছও আছে বেশ কয়েকটি এর মধ্যে নিম গাছ অন্যতম। তাই এগুলোকে ঘরের অন্দরের সঙ্গে কোনোক্রমে জুড়ে দিতে পারলে ভরপুর অক্সিজেন আর সুস্থ পরিবেশে কাটবে আপনার একেকটি রাত। যেকোন প্রকারের শব্দ বা যানবাহনের হর্ণ বাজার সাথে সাথে ৮৫% গাছপালা শোষণ করে নিয়ে শব্দ দূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে। এর মধ্যে নিম গাছের শোষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি।
একটি পূর্ণ বয়স্ক নিম গাছ ১০ জন মানুষের বার্ষিক অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করে। বাতাস থেকে ৬০ পাউন্ডের অধিক বিষাক্ত গ্যাস শোষণ করে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নিমের বাতাস শোধনের ক্ষমতা প্রমাণিত এবং যুগ যুগ ধরে এর সুনাম রয়েছে। অস্বাস্থ্যকর, বিষাক্ত ও ক্ষতিকর পরিবেশ শোধনে ও নিমের জুড়ি নেই। গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমের সময় ও নিমগাছের নিচে তাপমাত্রা থাকে ১০ ডিগ্রি সেঃ এর চাইতে ও কম। একটি পূর্ণবয়স্ক নিমগাছ দশটি এয়ারকন্ডিশনার এর চাইতেও কার্যকরীভাবে বাতাসকে শীতল করতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে শুভেচ্ছা হিসেবে সৌদি আরবে প্রেরিত ৫০,০০০ নিমের চারা আরাফাতের ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রতিবছর হজের সময় প্রায় ২০ লক্ষ হজযাত্রীদের শীতল ছায়া প্রদান করা ছাড়াও ঐ অঞ্চলের আবহাওয়া, ঋতু, প্রাণিসম্পদ সংরক্ষণে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। শত শত টন কার্বন শোষণের মাধ্যমে বায়ুর দূষণরোধ ও তাপদাহ দুপুরে প্রস্বেদনের মাধ্যমে বাতাসে প্রায় ১০০ গ্যালন পানি নির্গত করে পরিবেশ ঠান্ডা রাখে।। গবেষণায় দেখা গেছে একটি নিম গাছের অর্থনৈতিক মূল্য বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২৭ লক্ষ থেকে ৩৩ লক্ষ টাকা।

source: https://www.facebook.com/groups/sciencebeeresearch/permalink/1133611634650886/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

No comments:

Post a Comment

বল্টু

  ●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...