Monday, June 24, 2024

ভিন্ন ভূমিকায় বাবা রা

গল্প ১

- মিতু ওঠ, আজকে স্কুলের প্রথমদিন একদম late করা যাবেনা।
- পাপা আমাল ভয় কলছে।
- কিসের ভয় মা? স্কুল তো খুব মজার জায়গা, অনেক খেলাধূলো হয়, নতুন নতুন বন্ধু হয় আর আমি তো থাকবোই বাইরে দাঁড়িয়ে।
- তাই? তাহলে আমাল একতুও ভয় কলবেনা।
গল্প ২
- তিতলি ওঠ ওঠ প্র্যাকটিস আছে, সামনেই তোর নাচের অনুষ্ঠান।
- বাবা কেন এসব বলে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছো? তুমি তো জানো ডক্টর বলে দিয়েছেন আমি আর কোনোদিনও নাচতে পারবো না, অ্যাক্সিডেন্টে আমার ডান পা পুরোটাই বাদ গেছে আর এই কাঠের পা নিয়ে...
- সুধা চন্দ্রনের কথা শুনেছিস তো? তিনিও কিন্তু কাঠের পা নিয়েই নেচেছিলেন, ইচ্ছাশক্তির কাছে পৃথিবীর সকল দূর্বলতাই তুচ্ছ মা, তোর এই কাঠের পায়ের ওজন বুঝি তোর স্বপ্নের চেয়েও বড়?
- না, কখনোই না, হতে দেবো না, আমি নাচবো, এই পা নিয়েই নাচবো, আমি পারবো তো বাবা?
- নিশ্চই পারবি আমি আছি তো।
গল্প ৩
- এই নে, এই টাকাটা আপাতত কলেজে জমা কর বাকিটার ব্যবস্থা করছি।
- আমার জন্য কি এবার সর্বশান্ত হবে? তোমায় কত করে বলেছি আমায় কটা টিউশন পড়াতে দাও কিন্তু তুমি...
- পড়াতে দাও বললেই দেওয়া যায় নাকি? ডাক্তার হওয়া কি চারটিখানি কথা? কত পরিশ্রম লাগে, টিউশন পড়ালে নিজে পড়বি কখন?
- কিন্তু বাবা সংসার চালানোর জন্যেও তো টাকার দরকার।
- রুগিদের ওই চেয়ারে তো একদিন আমিও বসবো তখন তো তোকেই দেখতে হবে আমায় আর আলাদা করে ডাক্তারের ফিজ দিতে হবেনা টাকা তো বাঁচবেই আজ না হোক কাল।
- তুমিও না....
গল্প ৪
- মেয়েটা কে অতদূর পাঠাবি খোকা? আমাদের এখানেই তো...
- না মা এখানে সম্ভব নয় এই অজ পাড়া গায়ে কোনো ভালো কলেজ নেই।
- কলেজে পড়ানোর দরকার টা কি? যথেষ্ঠ বয়েস তো হয়েছে এবার একটা সম্বন্ধ দেখে....
- পাগল নাকি! আমরা মূর্খ মানুষ অত লেখাপড়া জানি না আর তাই দেখো নুন আনতে পান্তা ফুরায়, আমার মেয়ের বেলা তা হবেনা ওর পায়ের তলার মাটি শক্ত করে দিয়ে যাবো আমি।
- দেখ খোকা আইবুড়ো মেয়ে একা অত বড়ো শহরে থাকবে চারটে লোক চারটে কথা বলতে কিন্তু ছাড়বেনা।
- আমরা তো কতো অভাবে দিন কাটিয়েছি মা চারটে লোক এসে তো চার পয়সা ও দেয়নি আজ তাদের কথায় আমি আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ এর সিদ্ধান্ত নেবো? তা হয়না ও শহরে যাবে, কলেজে পড়বে, চাকরি করবে।
গল্প ৫
- কি হয়েছে খুলে বলুন না।
- আপনার মেয়ে বন্ধ্যা, অমন অলক্ষী ঘরে রাখাও পাপ।
- রিপোর্টে বুঝি তাই এসছে? আপনার ছেলের কোনো দোষ নেই তো?
- কি! আপনি আমার ছেলে কে এমন নোংরা অপবাদ দিচ্ছেন?
- যদি একটু বইপত্র ঘাটতেন তাহলে জানতে পারতেন যে বন্ধ্যা নারী পুরুষ নির্বিশেষে যে কেউ হতে পারে আর এটা তার দোষ নয়, পার্থক্য এটুকুই এত বড়ো কথা জানার পর ও আপনার ছেলে কে আমি ঠেলে ফেলে দিতে পারতাম না।
- থাক থাক অনেক হয়েছে এবার ওই মেয়েকে নিয়ে চলে যান ওই পাপ আমি আর এই বাড়িতে রাখবো না।
- আপনি রাখবেন না? আমিই আর আমার মেয়ে কে এখানে রাখবো না, ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবো ছেলেকে সই করে দিতে বলবেন।
- বাবা বিয়ের চার বছর পর আমি এভাবে চলে যাবো? সবাই কি বলবে?
- সবাই বলবে আমি আমার রাজকুমারী কে নরক থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
• জীবনের প্রতিটা প্রতিকূলতায় নিজের সর্বস্ব দিয়ে আগলে রাখা বটগাছের নাম বাবা, জীবনযুদ্ধে হার না মানা যোদ্ধার নাম বাবা, এই শব্দটা আছে বলেই আজও জোর গলায় বলা যায় 'না, সব পুরুষ সমান নয়', ভালো থাকুক পৃথিবীর সমস্ত বাবা, ভালোবাসায় রাখুক তার রাজপুত্র, রাজকন্যা দের।


No comments:

Post a Comment

বল্টু

  ●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...