Saturday, June 29, 2024

ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুস

৮০৯ ম্যাচ। ১৭০৭ উইকেট!

ওপরের সংখ্যাগুলো দেখার পর আর কিচ্ছুটি বলার দরকার নেই। একেবারে কিচ্ছুটি না। দু জন বোলার নিজেদের মধ্যে ১৭০৭টি আর্ন্তজাতিক উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এরপর আর একবারও মুখ ফুটে বলার দরকার নেই যে, তারা এই ক্রিকেট দুনিয়ার ইতিহাসের সফলতম বোলিং জুটি।
আসলে ‘সফলতম’ বললে ঠিক বোঝা যায় না। ইংরেজি শব্দ টেনে বলা উচিত-লেথাল। হ্যাঁ, দুনিয়ার সবচেয়ে ঘাতক পেস বোলিং জুটি ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুস।
শন পোলক বলেছেন, ‘সর্বকালের সেরা? অবশ্যই ওয়াসিম ও ওয়াকারের জুটি। কী উইকেটে খেলা হচ্ছে, সেটা ব্যাপার না। তারা তাদের স্কিল দিয়ে সেটা জয় করে নিতে পারতেন। বিশ্বসেরা জুটি বেছে নিতে হলে আমি তাঁদেরই বেছে নেবো।’
ওয়াসিম-ওয়াকারের গল্প বলতে বসলে তো ছোটখাটো একটা মহাকাব্য হয়ে যাবে। ফলে দু’জনের সাফল্য নিয়ে কথা না হয় আজকের মতো তোলা থাক। আজ বরং এই দুই কিংবদন্তির সম্পর্ক নিয়ে আলাপ করা যাক। আলাপ করা যাক দু’জনের বন্ধুত্ব নিয়ে।
কী বিশ্বাস হচ্ছে না?
যারা ইদানিংকালের খোজখবর রাখেন, তাঁদের কাছে ওয়াসিম-ওয়াকার কেবলই দু’জন ‘শত্রু’। তারা একে অপরের সাথে খুব একটা দায়ে না পড়লে কথা বলেন না, পরষ্পরের সামনে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না; এমনকি একসাথে কাজ করার প্রস্তাব পেলেও ফিরিয়ে দেন। কিন্তু চিরটাকাল এমন ছিলো না গল্পটা। একসময় তাঁরা দু’জন ছিলেন দুই দেহ এক প্রাণের বন্ধু।
মাঠে জুটি করার পাশাপাশি মাঠের বাইরে ওয়াসিম-ওয়াকার খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠলেন। ওয়াকারের প্রতি ওয়াসিমের তখনকার স্নেহটা ছিলো ভাতৃসূলভ। দু’জন হোটেল রুমে, ড্রেসিংরুমে ক্রিকেট এবং ক্রিকেটের বাইরের বিষয় নিয়ে সমানে আড্ডা দিতেন। এমনকি বিদেশ সফরে একসাথে ঘুরতেও দেখা যেতো তাদের।
পাকিস্তানী গ্রেট পেসার মুদাসসর নজর বলেছেন নব্বই দশকের মাঝামাঝি দু’জনের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। ঠিক কী নিয়ে দু জনের মধ্যে মনোমালিন্য ছিলো, এ কখনো জানা যায়নি। তবে লেখকরা মনে করেন, মূলত ইগোর লড়াই থেকেই এই টানাপোড়েন। দু জনই টের পাচ্ছিলেন যে, পরষ্পরকে তারকা হিসেবে দু জন ছাড়িয়ে যাচ্ছেন।
প্রথম প্রকাশ্যে সমস্যা হয়েছিলো ১৯৯৩ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। ওয়াসিম তখন প্রথম অধিনায়ক হয়েছেন। পাকিস্তান ৪৩ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর ওয়াসিম টিম মিটিংয়ে সিনিয়রদের সাথে কঠোর ব্যবহার করেন। বলেন যে, সবাইকে নেটে আরও কঠোর হতে হবে এবং বেশি সময় দিতে হবে। এই কথায় সিনিয়ররা খেপে গিয়ে ওয়াসিমের বিরুদ্ধে গ্রুপিং করেন। এবং বলা হয় যে, ওয়াসিমের তার আগ পর্যন্ত প্রিয়তম বন্ধু ও সহঅধিনায়ক ওয়কার নাকি এই ‘বিদ্রোহ’ উষ্কে দিয়েছেন।
এর ধারাবাহিকতায় দ্রুত ওয়াসিমকে সরিয়ে সেলিম মালিককে অধিনায়ক করা হয়।
তারপরও সে সময় অবশ্য প্রকাশ্যে কখনো দু জন গন্ডগোল করেননি। ১৯৯৯ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে ভারতে থাকা অবস্থায় আসলে প্রথম বিস্ফোরনটা হয়। ওয়াসিম তখন অধিনায়ক।
দিল্লি টেস্ট হেরে যাওয়ার পর ওয়াসিম ও ওয়াকার ড্রেসিংরুমে সবার সামনে একে অপরকে দোষারোপ করেন এবং ‘আগলি’ কথার লড়াইয়ে জড়ান।
পুরো ব্যাপারটা জঘন্য একটা রূপ পেলো ২০০৩ বিশ্বকাপে এসে। এর আগ পর্যন্ত যা অনেকটাই আড়ালে ছিলো, তা প্রকাশ্যে চলে এলো। সে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন ওয়াকার ইউনুস। বলা হয়, ওয়াসিমকে দলে নেওয়াতেই তার আপত্তি ছিলো। তারপরও দলে আসার পর দু জনের কথাবার্তাই বন্ধ। পরষ্পরকে ইঙ্গিত করে বাজে কথা বলার নজিরও দেখা গেলো।
পাকিস্তান দল ওয়াকার ও ওয়াসিমের দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। কোনো পক্ষ কারো সাথে কথা বলতো না। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন ইনজামাম-উল হক। তিনি সবার সাথে কথা বলতেন। অধিনায়ক ওয়াকার কোনো প্রয়োজন হলে ইনজামামের মাধ্যমে ওয়াসিমদের সাথে যোগাযোগ করতেন।
এই অবস্থা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ঠেলে দিলো। ফলে ওই ২০০৩ বিশ্বকাপ দু জনের জন্যই শেষ আর্ন্তজাতিক আউটিং হয়ে রইলো। এই ভয়াবহ বাজে সম্পর্কের কারণে দু জনেরই ক্যারিয়ার একই সাথে, একই দিনে শেষ হয়ে গেলো।
এও যেনো নিয়তির লেখা!
এখন কী অবস্থা? ওয়াসিম ধারাভাষ্যকার বা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। ওয়াকার পাকিস্তানের কোচ ছিলেন, এখন বোলিং কোচ। ফলে হুটহাট দেখা হয়ে যায়। হাত মেলান দু জনে। ছবির জন্য পোজও দেন। এ পর্যন্তই। কথা বিনিময়ে খুব একটা হয় না।
ক্রিকেট ইতিহাস অবশ্য এই দোস্ত বা দুশমনদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক মনে রাখবে না। ইতিহাসে লেখা থাকবে, পাকিস্তানে এসেছিলেন সর্বকালের সেরা দুই পেসার।
সেই সাফল্যটাই মনে রাখি আমরা।




Source:: https://www.facebook.com/100050251579629/posts/1020075153010861/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v




No comments:

Post a Comment

বল্টু

  ●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...