Saturday, September 7, 2024

দোষী কে?

গুরুতর ভাবে জখম হওয়া নগ্ন মেয়েটিকে নিজের গামছা জড়িয়ে কাছের নার্সিং হোমে নিয়ে এসেছে ভ্যানচালক। অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে মেয়েটা, কিন্তু রোগীর অবস্থা দেখেই নার্সিং হোম কর্মীরা পিছিয়ে যাচ্ছে। এটা তো দেখে মনে হচ্ছে রেপ কেস, পুলিসের ঝামেলায় পড়তে হবে।

ওরা ভ্যানচালকটিকে বলে- কোথা থেকে নিয়ে এসেছেন? কে করল এমন অবস্থা?
ভ্যানচালক বলল - মাঠের মধ্যে দিয়ে ভ্যান নিয়ে আসছিলাম, হঠাৎ ঝোপরির মধ্যে থেকে মেয়েটির কাতরানি শুনে নিয়ে এলাম।
তখন ওরা বলে - ঠিক বলছো তো, নাকি নিজেই কুকীর্তি করে এখন ভালো মানুষের মতো নিয়ে এসেছো এখানে? সত্যি করে বলোতো?
ভ্যানচালক বলে - আরে ছিঃ ছিঃ ছিঃ, এমন কথা কানে শোনাও পাপ। ওর বয়সী আমার একটা মেয়ে আছে ঘরে। তাই , ওকে ওখানে পড়ে থাকতে দেখে আর থাকতে পারলাম না।
ইতিমধ্যেই নার্সিং হোম থেকে ফোন পেয়ে দুই তিন জন পুলিশ এসে হাজির হয়েছে। একজন পুলিশ বলল- কি রে, খুব যে সাধু গিরি দেখাচ্ছিস, সত্যি করে বলবি, নাকি ধোলাই দেব?
ভ্যানচালক একজন পুলিশের পায়ে ধরে বলল- হুজুর,আমার কথা বিশ্বাস করেন। আমি ভোরবেলা বাড়ি থেকে বের হই ভ্যান নিয়ে। এখনো কিছু মুখে দিইনি। বাসিমুখে মিথ্যা কথা বলবো? সত্যিই বলছি আমি কিছু জানি না।
পুলিশ তখন ডাণ্ডা দিয়ে ওকে সরিয়ে দিয়ে বলে- ওসব ভনিতা আমাদের দেখাতে আসবি না,বুঝলি?
ভ্যানচালক বললে- আচ্ছা, আমার কথা বিশ্বাস না হলে মেয়েটির মুখ থেকেই শুনবেন । আগে তো আপনারা ওকে চিকিৎসা করতে সুযোগ দিন। একটু সুস্থ করে তুলুন, তারপর ওর মুখ থেকেই নাহয় শুনবেন।
পুলিস তখন কয়েকটা ছবি তুলে রাখল ঐ মেয়েটির এবং ভ্যানচালকটির। ভ্যানচালককে বলল- আজকে তুই থানাতেই থাকবি,যতক্ষণ না সত্যি ঘটনা জানতে পারছি ততক্ষণ।
ভ্যানচালকটি বলে - বাবু, আমি দিন আনি দিন খাই। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে আমার পরিবার। সংসার খরচ,মেয়েটার পড়ার খরচ সবকিছুই সামলাই এই ভ্যান টেনে। রোজগার বন্ধ হলে আজকে কারো মুখে ভাত জুটবে না। আমাকে আটকে রাখবেন না, ছেড়ে দিন দয়া করে।
কিন্তু,কে কার কথা শোনে! অসহায় মানুষের উপকার করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে বুঝতে পারেনি সরল ভ্যানচালকটি। অগত্যা নিরুপায় হয়েই থানায় বসে থাকতে হল।
এদিকে মেয়েটির প্রাথমিক চিকিৎসা করার পরেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো তার এই চরম ঘটনার জন্য দায়ী কে?
মেয়েটি বললো - বাবু, আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী আমাদের গ্রামের মোড়লের ছেলে ও তার তিন বন্ধু।
গ্রামের মোড়লের সাথে থানার পুলিশদের একটা খুব ভালো সম্পর্ক আছে। পুকুরের মাছ,জমির টাটকা সবজি, বাগানের ফল সবকিছুই তারা পেয়ে থাকেন। কাজেই, মেয়েটিকে ধমক দিয়ে বলে- এই মেয়ে ,একদম বাজে কথা বলবি না।
মেয়েটি বলল - আমি কোন বাজে কথা বলছি না, কেনই বা বাজে কথা বলতে যাব?কোন মেয়ে কি এসব কথা এমনি এমনি বলে?
পুলিশ ধমক দিয়ে বলল- আরে এমনি এমনি কেন বলব? তুই টাকা কামানোর জন্য বলছিস।
পুলিশ তখন বললে- তোকে এসব কথা বলতে কে শিখিয়ে দিয়েছে, ভ্যানচালক?
মেয়েটি বলল - না, না। আমাকে কেউ শিখিয়ে দেয়নি। আমাকে ওরা তুলে নিয়ে গিয়ে -- বলতে বলতে মেয়েটি কাঁদতে শুরু করল।
পুলিশ বলে- তারপর কি হল বল কাঁদছিস কেন?
মেয়েটি বলে- ওরা আমাকে একের পর একজন করে আমার উপর -- আর বলতে পারবো না আমি।
পুলিশ বলল- আমাদের কাছে পুরো ঘটনা বলতে হবে, নাহলে আমরা দোষীকে কিভাবে শাস্তি দেব?
মেয়েটি বলল- আমার উপর অত্যাচার করেছে।
পুলিশ বললে - কিরকম অত্যাচার? তোকে কি করে মারধর করেছে? নাকি চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে বেরিয়েছে?
মেয়েটি বলল- না না,সেসব কিছুই করেনি। ওরা আমাকে-- আমার শরীরটাকে নিয়ে ছিনিমিনি করেছে।
পুলিশ জিজ্ঞেস করল - তাতেও ঠিক মতো বুঝতে পারলাম না, পুলিশের কাছে খোলাখুলি বলতে হবে পরিষ্কার করে।
মেয়েটি বলল - ওরা আমার সর্বনাশ করেছে, আমাকে দেখে কি আপনারা বুঝতে পারছেন না?
এর থেকে খোলাখুলি আর কি বলতে পারি আমি?
পুলিশ তখন বললে- আচ্ছা সে নাহয় বসলাম তাহলে যখন ওরা তোর উপরে অত্যাচার করছিল তখন তুই চিৎকার করিস নি কেন? চুপ করে মজা উপভোগ করছিলি?
মেয়েটি বলল - ওরা আমার মুখ বেঁধে রেখেছিল।
পুলিশ বলল- আচ্ছা, তা ওরা কতক্ষণ ধরে তোর সঙ্গে লিপ্ত ছিল? পনের মিনিট, নাকি তার কম?
মেয়েটি বলল- আমি কিছু জানি না হয়তো মনে নেই।
পুলিশ বলল- তোর কাছে কোন প্রমাণ আছে যে, ঐ মোড়লের ছেলে আর তার বন্ধুরা তোকে রেপ করেছে?
মেয়েটি বলল - আমার কাছে কোন মোবাইল ছিল না,আর থাকলেও কি আমি ছবি তুলতে পারতাম?
পুলিশ বলল- বুদ্ধি থাকলে অনেক কিছুই হয়।
তা মোড়লের ছেলের সাথে কি তোর কোন চক্কর বা প্রেম-টেম কিছু ছিল?
মেয়েটি বলল - না, এমনিই চিনতাম। স্যার ওরা হয়তো জানতো- আমার বাবা মা দিদির শ্বশুর বাড়িতে গেছে। আমি সন্ধ্যা বেলায় বাবার চা- এর
দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলাম। ঠিক সেইসময় ফাঁকা রাস্তায় ওরা দাঁড়িয়ে কথা বলছিল।
পুলিশ বলল- তারপর?
মেয়েটি বলল - তারপর ওদের মধ্যে একজন আমার সাইকেল আটকালো, তারপর জোর করে ঐ ঝুপড়িতে টেনে নিয়ে যায়।
পুলিশ বলল- তাহলে তোর বাবা - মা তো জানে না এখনো।
মেয়েটি বলল- না, আজকেই ফিরবে বিকেলে।
কিভাবে মুখ দেখাবো আমি? কোন মুখে দাঁড়াব ওদের সামনে?
তাছাড়া, ঐ ল লোকগুলো আমাকে হুমকি দিয়েছে - কাউকে কিছু বললে আমাকে ওরা মেরে ফেলবে।এমনকি আমার বাবা মাকেও মেরে ফেলবে বলেছে।
পুলিশ বলল- তাহলে তুই কি চাস? বাড়িশুদ্ধ সবাই মরতে নাকি, বাঁচতে চাস?
মেয়েটি বলল- আমি বাঁচতে চাই ।আমার বাবা-মাকেও বাঁচিয়ে রাখতে চাই।
পুলিশ বলল- তাহলে আমরা যেটা বলছি, সেটা কান খুলে শোন। আর আমরা যেটা বলবো,সেটাই তুই করবি।ওতেই তোর ভালো হবে।
মেয়েটি বলল- আমাকে কি করতে হবে বলুন।
পুলিশ বললে - এখন আমরা ওই ভ্যানচালকে থানা থেকে এখানে নিয়ে আসছি। ওর সামনে তোকে জিজ্ঞেস করবো - তোর এই অবস্থার জন্য দোষী কে? তুই বলবি - ওই ভ্যানচালক তোর এই অবস্থা করেছে।
মেয়েটি বলল - ওই বাবার বয়সী মানুষটার নামে এত বড় মিথ্যা অভিযোগ ,এত বড় মিথ্যা কথা আমি বলতে পারবো না।
পুলিশ বলল- তাহলে তুইও মর, আর তোর বাবা মাকেও মেরে ফেল। একটা কথা মনে রাখবি- গ্রামের মোড়লকে চটালে তোরা কিন্তু গ্রামে বাস করতে পারবি না । সবাইকেই না খেয়ে মরতে হবে। কিন্তু ভ্যানচালকের নামে দোষ দিলে, তোরা গ্রামে বহাল তবিয়তে থাকতে পারবি। উপরন্তু,বেশ কিছু টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব আমরা ঐ মোড়লের কাছে থেকে। তবে হাঁ, মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে হবে।মুখ খুললেই সাংঘাতিক বিপদ,সেই বিপদ থেকে আমরাও বাঁচাতে পারবো না।
এরপর পুলিশ যথারীতি থানা থেকে ওই ভ্যানচালককে নিয়ে আসলো। ফোন করে ম মেয়েটির বাবা-মাকেও হাজির করা হলো।ডাকা হল গ্রামের মোড়লকেও। একজন পুলিশ মোবাইলে সমস্ত কথা ভিডিও করার জন্য প্রস্তুত হল।
এরপর পুলিশ সবার সামনে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল- তোমার উপর কে এমন অত্যাচার করেছে বলো। কোন ভয় নেই, আমরা তো আছি । নির্ভয়ে একদম সত্যি কথা বলবে। আমরা প্রকৃত দোষীকেই শাস্তি দেব ,সে যেই হোক না কেন।
মেয়েটি একবার পুলিশের দিকে, একবার বাবা মায়ের দিকে, একবার ভ্যানচালকের দিকে , একবার গ্রামের মোড়লের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে থাকল।
পুলিশ বলল- কি হল বলো, সময় নষ্ট করো না। বলো কে দায়ী?
মেয়েটি ভ্যান চালকের দিকে আঙ্গুল তুলে বলল-- এই লোকটি আমার সর্বনাশ করেছে ।এই লোকটিই আমাকে ঝোপের মধ্যে নিয়ে গিয়ে নির্মম অত্যাচার করেছে ।ওকে আপনারা শাস্তি দিন।
নিরীহ ভ্যানচালকের মাথায় যেন বজ্রপাত হলো!
একি শুনল সে! যাকে সে সারা দিনের উপার্জনের কথা ভুলে গিয়ে নিজের মেয়ের মতো মনে করেছে , আবার চিকিৎসার জন্য নার্সিংহোমে নিয়ে এসেছে।
তারকাছে যৎসামান্য যা কিছু টাকা ছিল সেটা নার্সিংহোমে জমা করেছে মেয়েটির চিকিৎসার জন্য। আর সেই মেয়েটি বলে কিনা সেই দোষী।
মাটিতে বসে পড়ে বলে - মা রে, এ তুই কি বলছিস? আমি তোকে এখানে নিয়ে এলাম, তোকে বাঁচিয়ে তুললাম। মৃত্যুর মুখ থেকে যে তোর জীবন ফিরিয়ে দিল, তাকেই তুই দোষী বানালি!
পাঠকেরাই বলুন - দোষী কে? মোড়লের ছেলে ও তার বন্ধুরা? ঐ মেয়েটি, নাকি ভ্যানচালক,? অর্থের জোর নাকি দারিদ্রতা? পুলিশ নাকি সমাজ?
~~~~~সংগৃহীত ~~~~~
source: https://www.facebook.com/100057797889404/posts/918987873371134/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

No comments:

Post a Comment

বল্টু

  ●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...