Wednesday, May 22, 2024

ফকির আলমগীর: অন্যরকম পহেলা মে

 ফকির আলমগীর: অন্যরকম পহেলা মে।

গত শতকের আশির দশকের কথা।
চট্টগ্রামের 'আগ্রাবাদ দাবাঘর' একটি দাবা টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে। আমাদের খুব ইচ্ছে শেষদিন জম্পেশ একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সে উদ্দেশ্যে ঢাকার অনেকের সাথেই যোগাযোগ করা হলো।সবাই 'না' করে দিলেন, একজন বাদে।
তাঁর নাম ফকির আলমগীর।
এখন সমস্যা, তাঁকে কোথায় রাখি? আমাদের ট্যাঁকের অবস্থা খুব খারাপ। ভালো হোটেলে রাখার ক্ষমতা নেই। অনেক ঝামেলা করে একটা ভাঙাচোরা সরকারি রেস্ট হাউজ ঠিক করলাম। ভয়ে ভয়ে আছি, থাকার বেহাল অবস্থা দেখে রেগে যান কিনা?
দেখলাম তাঁর কোনো বিকার নেই। এসেই কাপড় পালটে বললেন, এক কাপ চা খাওয়াতে পারবি?
প্রথম দেখাতেই 'তুই'! অন্য কেউ হলে মাথার তালুতে বিখ্যাত রাগ নেচে উঠতো, কিন্তু তাঁর ডাকে এত স্নেহ! রাগ করার প্রশ্নই উঠে না।
চা খেতে খেতে বললেন, বাসের টিকিট পাঠাইছস। টাকা দিছে কে?
আমাদের নেতা পিন্টু ভাই বিগলিত কণ্ঠে বললেন, আমরা দিছি, স্যার। স্টুডেন্ট মানুষ, তাই ভালো বাসের ব্যবস্থা করতে পারি নাই।
'গুল্লি মারি স্যারের, আমি স্যার না, ভাই ডাকবি, ভাই।'
আমরা হাত কচলাতে থাকি।
'দুপুরে কী খাবেন ভাইজান?'
'যা খাওয়াবি, তাই খাবো, তবে তিতা করলার ভাজি রাখতে পারস, মাংস-টাংসের দরকার নাই, তোদের তো দেখি ফকিরা হাল, বেশি খরচ করিস না।'
'আচ্ছা, আচ্ছা, ভাইজান।'
সন্ধ্যায় তিনি প্রায় দু'ঘন্টা হলভর্তি দর্শককে পাগল করে রাখলেন। মনে হচ্ছে একধরনের ধ্যানের মধ্যে আছেন, সেখান থেকেই উঠে আসছে বজ্রকণ্ঠ গান। সব শেষে গাইলেন মে দিবসের সে-ই বিখ্যাত গান,
'নাম তার ছিল জন হেনরি
ছিল যেন জীবন্ত ইঞ্জিন
হাতুড়ির তালে তালে গান গেয়ে
শিষ দিয়ে খুশি মনে কাজ করে রাতদিন।'
পুরো হল উম্মাতাল, পাগলের মতো সবাই সুর মিলিয়ে নাচছে। হঠাৎ দেখি কঠিন বাম রাজনীতি করা নাজিম ভাই এবং তাঁর সঙ্গীরা উঠে দাঁড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ ডান হাত রেড স্যালুটের ভঙ্গিতে উপরে তুলে ধরে নিঃশব্দে কাঁদছেন।
সেদিন ছিল পহেলা মে।
পরদিন তিনি চলে যাবেন। পিন্টু ভাই অনেক ইতস্তত করে তাঁর সম্মানী নিয়ে সামনে দাঁড়ালেন।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এইটা কী?
পিন্টু ভাই কাঁপতে কাঁপতে বললেন, আপনার-- আপনার---
তিনি হো হো করে হেসে বললেন, অনুষ্ঠান যে করছস টাকা বাকি আছে না? হল ভাড়া, মাইকের টাকা, যন্ত্রীদের টাকা, আছে না?
আমরা আমতা আমতা করতে থাকি।
তিনি হাসতে হাসতে ঝোলা থেকে হাজার দুয়েক টাকা বের করে বললেন, এইটা রাখ, বাকি শোধ করিস।
আমরা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি।
তিনি বাঁজখাই গলায় বললেন, রাখ টাকাটা। আমার নামের আগে 'ফকির' নামটা এমনি এমনি লাগাই নাই। আমার টাকার দরকার নাই। হিম্মত কইরা প্রোগ্রাম করছস এটাই যথেষ্ট।
তারপর আর কখনো তাঁর সাথে দেখা হয়নি। আজ তিনি নেই। প্রতি বছর মে দিবসে তাঁর কথা মনে পড়ে, কানে বাজতে থাকে বাঁজখাই কণ্ঠ, 'আমার নামের আগে 'ফকির' নামটা এমনি এমনি লাগাই নাই। আমার টাকার দরকার নাই।'

source: https://www.facebook.com/groups/905458924023335/permalink/976538933582000/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

No comments:

Post a Comment

বল্টু

  ●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...