মার্ক টোয়েনকে খুজতে নাকি ঠিকানা লাগতো না। নাম বললেই আমেরিকার যে কোনো প্রান্ত থেকে লোকে বাড়ি চিনিয়ে দিতো।
অবশেষে সেই অভিজ্ঞতাটা হলো। মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড় থেকে সিএনজিতে বললাম, কেরানীগঞ্জ যাবো। সিএনজি চালক প্রশ্ন করলেন, ‘কেরানীগঞ্জ তো অনেক বড়। কোথায় যাবেন?’
বিপদে পড়ে গেলাম, ‘কোথায়, তা তো জানি না। মোহাম্মদ রফিকের বাড়ি।’
‘ক্রিকেটার রফিক?’
‘জ্বি।’
‘আগে কইবেন না। রফিক ভাইয়ের বাড়ি যাইতে কী ঠিকানা লাগে?’
রফিক ভাইয়ের বাড়ি এর আগেও বার তিনেক গেছি। তবু জায়গাটা ভুলে যাই। যদিও সাংবাদিক পছন্দ করেন না। তারপরও ছুতোছাতা করে গিয়ে স্বাক্ষাতকার নিয়েছি। এবার বললাম, ছেলে-মেয়েকে একটু আপনাকে একবার দেখাতে চাই।
রফিক ভাই ফোনের ওপাশ থেকেই একটু গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘আসেন, ভালো কথা। স্বাক্ষাতকার লইতে চাইবেন না।’
মোহাম্মদ রফিকের ক্রিকেটীয় যোগ্যতা বুঝিয়ে বলা খুব জরুরী ব্যাপার নয়। পরিসংখ্যান আর ইতিহাস সেটা বলবে।
আমার কাছে মোহাম্মদ রফিক লার্জার দ্যান লাইফ এক চরিত্র। শুভ্রদাই একবার বলেছিলেন, ‘রফিকের জীবনী স্কুল পাঠ্য হওয়া উচিত।‘
দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় স্পিনার, জীবনের সংগ্রাম; রফিককে অনেক কারণেই মনে রাখা চলে। কিন্তু এর কোনোটাই রফিক নন। রফিক হলেন সেই মানুষ; যিনি বুড়ি গঙ্গার চর থেকে উঠে এসে আমাদের এই আলো ঝলমলে দুনিয়ার তারকা হয়েছেন এবং আবার বুড়িগঙ্গার তীরে ফিরে গেছেন।
আজকাল সর্বস্ব খুইয়ে একটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি করার নেশায় আছেন।
২০০৩ সালের মুলতান টেস্টে উমর গুলকে বাগে পেয়েও মানকাডিং করেননি। করলেই টেস্ট জিতে যেত বাংলাদেশ। বহুকাল পরে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘রফিক ভাই, রান আউটটা কেন করেননি?‘
রফিক স্পিরিট অব ক্রিকেটের মতো শব্দ জানেন না। তিনি হেসে বলেছিলেন, ‘লাভ কী হতো? আমরা ম্যাচ জিততাম। কিন্তু মানুষ আমাদের ছোটোলোক বলতো। আমরা তো ছোটোলোক না। কতো ম্যাচ জিতবো; ছোটোলোকি করে লাভ আছে?‘
দিস ইস মোহাম্মদ রফিক!
চেতনা রফিককে শেখাতে হয় না, রফিক কলিন কাউড্রেকে চেনেন না; রফিকই স্পিরিট অব ক্রিকেট
লেখা ও ছবি: দেবব্রত মুখার্জী
Source: https://www.facebook.com/100063727051153/posts/985526886914871/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
from comments
একজন নিরহংকার অথচ বিশাল মনের মানুষ। বন্যায় যখন তার ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত তখন ক্রিকেট বোর্ড হতে তার পরিবারকে শেল্টার দেয়ার কথা বল্লে তিনি তা প্রত্যাক্খান করেন। এবং বলেন যে আমার এলাকার সকল মানুষই বন্যার পানিতে কষ্ট করিতেছে। তাদের সকলকে ছেড়ে স্বার্থপরের মত শুধু নিজের পরিবার নিয়ে ভালো থেকে লাভ কি! টিভিতে দেয়া রফিকের সেই সাক্ষাৎকার এখনও মনের অগোচরে চোখের কোণে জল ছলছল করে।
No comments:
Post a Comment