Friday, May 31, 2024

সাকিব আল হাসান

 নক্ষত্র থেকে ‘সাকিব’ নিজেই এক ক্রিকেট আকাশ

যাকে নক্ষত্র ভাবা হতো, পরে দেখা গেলো সে নিজেই এক ক্রিকেট আকাশ। সাকিব আল হাসান, মোটে তিনটে শব্দ। অথচ নিজেই দেশের ক্রিকেটকে এনে দিয়েছে সহস্র শব্দের উৎসব।
৩৭ এর চেনা সাকিবকে চেনা যাক, একটু ভিন্নভাবে, কিংবা সেই একই গল্পে। যাকে বোঝা দায়, কিংবা সহজেই বোঝা যায়। যে দূর আকাশের তারা কিংবা যেনো পাশের বাড়ির ফয়সাল। যার কাছে ম্যাচ জেতানোর হাজারটা আবদার!
এক সাকিবের জীবনের গল্পের অভাব নেই। গল্প হলেও তো সত্যিই।
প্রায় ৭২ হাজার জনসংখ্যার দেশ ডমিনিকায় একজনের নাম সাকিব আল হাসান। ২০০৯ সালে যখন সাকিব ডমিনিকায় খেলতে গিয়েছিল, তখন এক ছেলের জন্ম দেশটায়। সেবার সাকিবের খেলা দেখে জনৈক ভদ্রলোকের এত ভালো লেগে গিয়েছিল যে উনি ছেলের নাম রেখে দিয়েছেন ‘সাকিব আল হাসান’।
প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরের ডমিনিকা থেকে দুই হাজারেরও কম কিলোমিটারের কাশ্মীরে ফিরে যাই। সাকিব নিজেই পুরনো এক সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছিলেন, পরিচিত একজন একবার কাশ্মীর যায়৷ কাশ্মীরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একজনের ঘরে ঝোলানো ছিল সাকিবের ছবি। ক্যারিয়ারের মাঝপথে এই ছবি কিংবা কথাগুলো সাকিবকে বেশ অনুপ্রাণিত করেছিল।
এক বন্ধুবর ক্রীড়া সাংবাদিকের মুখেই শোনা। কাশ্মীরে সাকিবের প্রতি আবেগটা আসলেই অন্যরকম। কাশ্মীর ট্যুরে যে গাড়িতে তিনি ঘুরছিলেন সেই গাড়ির চালক স্পোর্টস রিপোর্টার শুনেই তার কাছে সাকিবের কথা জানতে চাইলেন। বহুবার সাকিবের সংবাদ সম্মেলন কাভার করা হয়েছে শুনেই তাঁর সে কি আবেগ। সঙ্গে সঙ্গে ১০ বছরের ছেলেকে ফোন। বললেন, বাবা তোমার পছন্দের ক্রিকেটার সাকিবের কাছাকাছি গিয়েছিল এমন একজন আমার গাড়িতে চড়ছে।
শুধু তিনি নন। ঘোড়সওয়ার তরুণটাতো আরও আবেগী। 'সাকিব স্যার' সম্বোধন ছাড়া বাংলাদেশের মহাতারকার নামটা একবারও শুধু সাকিব বলে উচ্চারণ করেননি।
মাগুরা থেকে পাশের কাশ্মীর কিংবা সূদুর ডমিনিকা। এক জীবনে সাকিব আর কী চাইতে পারতেন?
শুধু সাধারণ সমর্থকরা? সাকিবকে কিংবদন্তী মানেন, যাঁদের সঙ্গে খেলেন তারাও। কিংবদন্তীদের চোখেও সাকিব কিংবদন্তী। এই তো সদ্য শেষ হওয়া বিপিএলে আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার বাবর আজম মুগ্ধ হয়ে করেছেন সাকিব বন্দনা। একই দল রংপুর রাইডার্সের আরেক অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীও সাকিবকে মেনেছেন সেরা।
এমনকি যুব দলের ক্রিকেটরাও মুগ্ধ এক সাকিবে। এইতো সদ্য ২০ না পেরোনো যুব এশিয়া কাপ জেতা দলের জিসান আলম কিংবা পেসার রোহানাত দৌলা বর্ষণ প্রথমবার বিপিএলের মঞ্চে নেমে সাকিবকে খুব কাছ থেকে দেখেও প্রকাশ করেছেন উচ্ছ্বাস।
গল্প ছিল আরো। ইয়ান স্মিথের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারটা ঠিক সেই অর্থে বড় হয়নি৷ তবে কমেন্ট্রি বক্সে মাইক্রোফোন হাতে বেশ নামই কামিয়েছেন৷ হুট করে নেলসনের ভদ্রলোককে মনে পড়ার কারণ বিশ্বকাপের একটা ম্যাচে কমেন্ট্রির জন্য।
সাকিব রান করেন, উইকেট নেন, দারুণ ফিল্ডিং করেন। ২০১৯ বিশ্বকাপে সর্বেসর্বা এই অলরাউন্ডার৷ একটা বিশ্বকাপে এভাবেও পারফরম্যান্স করা যায়, এই নতুন এক অবাক হওয়া ব্যাপারের সাথে সাকিব সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। বাউন্ডারি সীমানার কাছে খুব চেষ্টা করেও সাকিব একটা বাউন্ডারি বাঁচাতে পারেননি৷ সাকিবও পারেনা, এমনও হয়! ইয়ান স্মিথ অবাক হয়ে, মাইক্রোফোন হাতে বলেছিলেন, 'সাকিব ইজ অফিসিয়ালি হিউম্যান...'
নানান ইস্যুতে সাকিবের যা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে, এই যে সাকিবকে অনেকেই বিশেষণে বিশেষায়িত করতে সুপারম্যান, সুপার হিউম্যান বলেন সত্যিই কী তাই? মাঝেমধ্যে মনে হয়, কাড়ি কাড়ি টাকা থাকার পরেও সাকিব নিঃসঙ্গ। নিজের অনেক কথাই বলতে পারেননা। বড় তারকাদের এমন হয়, বোঝা যায় না, বুঝতেও দেয় না। সাকিবের চেয়ে বড় তারা আর কে আছে এদেশের ক্রিকেটে? সাকিবকে বোঝে সেই সাধ্যি কার? ইয়ান স্মিথ না হয়, একটা বাউন্ডারি বাঁচানোর আক্ষেপ দেখে বলেছিলেন, 'সাকিব ইজ অফিসিয়ালি হিউম্যান...' সত্যিই তাই?
ক্রিকেটার সাকিব মাঠের তর্কাতীত সেরা, দেশের সেরা অ্যাথলেট বললেও ভুল হবে কী? স্বাধীন বাংলাদেশের সেরা অ্যাথলেট মানুষ হিসেবে কেমন? খুব খারাপ? প্রায়শই তো আলোচনায় তা উঠে আসে। তবে সাকিবের ভালো কাজগুলো কেন জানি, সামনে আসতেই চায় না।
বিকেএসপির কেউ অসুস্থ, ইনজুরিতে পড়লে সাকিব এগিয়ে আসেন। আগেপরে অনেক ঘটনা আছে। কয়েক মাস আগের রামিমের ঘটনা। অনূর্ধ্ব ২১ হকি প্লেয়ার রামিম ওমানে খেলতে গিয়ে লিগামেন্টের ইনজুরিতে পড়লে সাকিব শোনা মাত্রই এগিয়ে এসেছেন।
এর আগে চট্টগ্রামে এক সিরিজে দুই ম্যাচে তিনটি পুরস্কার পেয়েছিলেন সাকিব। তবে চট্টগ্রাম ছাড়ার আগে একটা পুরস্কারের অর্থ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মাঠকর্মীদের দিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
এমনকি বিসিবিতে কর্মরত অফিস সহকারী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং মাঠকর্মীদের ঈদ উপলক্ষে ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন সাকিব।
কোভিডের সময়ে নানান সাহায্য করেছেন, নিজের রেকর্ডগড়া ব্যাট নিলামে তুলেছেন, ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের ঘটনা তো একেবারে সবশেষ।
গল্পের মতো কিন্তু সত্যি…
পিটার রোবাক, ভদ্রলোক স্বীকৃত ক্রিকেটে রান করেছেন প্রায় ২৫ হাজার। ক্রিকেটার-কোচ-সাংবাদিক-লেখক পরিচয়ের অভাব নেই অক্সফোর্ডের এই মানুষটার। তবে এক যুগ আগে স্মৃতি হওয়া ভদ্রলোককে মনে পড়ার কারণ শচীন টেন্ডুলকার। ক্রিকেটের প্রতিশব্দ এসআরটির জনপ্রিয়তা দেখে অবাকই হয়েছিলেন...
অবশ্য অবাক না হয়ে আর যাবেন কই? শিমলা থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন, ট্রেন থামল শচীনের জন্য। শচীন তখন ৯৮ রানে অপরাজিত। জীবন ইনিংসে ৫৫ বছরেই কেপটাউনে স্মৃতি হওয়া রোবাক লিখেছিলেন, 'সবাই অপেক্ষা করছিল শচীন সেঞ্চুরি করবে বলে... এই জিনিয়াস ভারতে সময়কেই থামাতে জানত...'
হুট করে পিটার রোবাক-শচীন টেন্ডুলকার এসেছেন সাকিব প্রসঙ্গে। এইতো গেলো বছর, চেমসফোর্ডে কমেন্ট্রি বক্সে বসা নেইল ও'ব্রায়েন যা বললেন, তা ছিল এমন... 'সাকিব অধিনায়ক ছিল আগের এক বিপিএলে। সাকিবের সঙ্গে মিরপুরে ব্যাটিং করছিলাম। ২৫ হাজার মানুষ ম্যাচটা দেখছিল। সাকিব আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই চলে গেলো...'
ভিন্ন আরেকটা ঘটনা। জনপ্রিয় উপস্থাপক বিক্রম সাঠে, শচীন নিয়ে একটা দারুণ বই লিখেছিলেন। বইটার নামের বাংলা তর্জমা হচ্ছে, 'শচীন যেভাবে আমার জীবন ধ্বংস করেছে... কিন্তু জীবনের সব ক্রিকেটীয় পরীক্ষায় পাস করার অনুমতি দিয়ে গেলো...'
সাকিব এই বাংলায় সময় থামাতে পারেনি, কাউকে জীবনের সব ক্রিকেটীয় পরীক্ষায় পাস করার অনুমতি দিয়ে যেতে পারেননি। তবে অনেকের শৈশবের, কৈশোরের ক্রিকেট আনন্দের নাম হয়েছেন বটে। বাড়িয়ে বললাম কী?

source : https://www.facebook.com/100064733080453/posts/839060238261738/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

No comments:

Post a Comment

বল্টু

  ●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...