Saturday, June 29, 2024

ক্রিকেটে স্লেজিং খুবই স্বাভাবিক ঘটনা

তানজিম সাকিব-কোহলির স্লেজিং/অঙ্গভঙ্গি নিয়ে দুটি কথা।

স্লেজিং ক্রিকেটে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তা যত “ভদ্রলোকের” খেলাই হোক না কেন। ভদ্রলোকেরা ভদ্রভাবে গালাগালি করে, অথবা এমন সব কথা বলে যাতে বিপক্ষ দলের প্লেয়ারের ফোকাস নষ্ট হয়। এইটা খেলারই অংশ।
স্লেজিংয়ের সম্রাট বলা হয়ে থাকে স্টিভ ওয়াহকে, দুনিয়া ওরচেয়ে ভাল ক্যাপ্টেন খুব বেশি দেখেনি। সাধারণ একটি দলকে কিংবদন্তিতে ঠাসা একটা অপরাজেয় দলে পাল্টে ফেলেছিল।
ওরই সাগরেদ, স্পিন জাদুকর শেন ওয়ার্ন ছিল আরেক স্লেজিং মাস্টার। মাম্মি ড্যাডি এক করে গালি দিত। স্লেজিংয়ে ওস্তাদ ছিল গ্লেন ম্যাকগ্রা। কোথায় যেন পড়েছিলাম এক ম্যাচে রাম নরেশ সারোয়ানকে বলেছিল, “লারার নু&$ চুষতে কেমন লাগে?”
জবাবে সারোয়ান বলে, “তোর বৌকে জিজ্ঞেস করে দেখ। ও ভাল বলতে পারবে।”
এ নিয়ে সিরিয়াস মারামারি বেঁধেছিল। ম্যাচটা অস্ট্রেলিয়া হারে।
সৌরভ গাঙ্গুলির এফেয়ারের গুজব ছিল নায়িকা নাগমার সাথে। মাঠে এ নিয়ে যা তা স্লেজিং করতো অস্ট্রেলিয়া। ইন্ডিয়াও পাল্টা জবাব দিত। হরভজন সিং একবার সাইমন্ডসকে “তেরি মাকি….” (তোর মায়েরে….) বলে, কিন্তু জাতিতে এবোরজিন (আদিবাসী) সাইমন্ডস ভেবেছে ওকে “মাঙ্কি” (বান্দর) গালি দিয়েছে। এই ঘটনা বহুদূর এগিয়েছিল।
ইয়ুভরাজ সিংকে ফ্লিন্টফ বলেছিল তোর সাথে “দুষ্টু কাজ" (বুঝে নেন) করব।
ইয়ুভরাজ ওকে নিজের ব্যাট দেখিয়ে দিয়ে বলে “তোর পিছন দিয়ে এই ব্যাট দিয়ে দুষ্ট কাজ করবো।”
একজন আরেকজনকে “দুষ্ট কাজ" গালি দিতে দিতে বেচারা ব্রডকে ইউভি ৬ বলে ৬ ছক্কা মেরে দিল।

মুরালিধরন স্লেজিং করতো আরও রাজসিকভাবে। বিপক্ষ দলের ড্রেসিং রুমে গিয়ে একেকটা ব্যাটসম্যানের দিকে নিজের ভয়ংকর গোলগোল চোখ পাকিয়ে বলতো, “আজকে তুই আমার!”
দেখা যেত বেশিরভাগ সময়েই মুরালি সেই ব্যাটসম্যানকেই আউট করতো।

হ্যা, টেন্ডুলকার ছিল ব্যতিক্রম। সাকলায়েন মুশতাক ক্যারিয়ারের শুরুতে শচীনকে গালাগালি করছিল। শচীন তখন ওর সামনে এসে বলে, “আমিতো তোমাকে গালি দিচ্ছি না, তুমি তাহলে কেন দিচ্ছ?“
সাকলায়েন সেদিন এত লজ্জিত হয়েছিল যে আর কখনই শচীনকে গালি দেয়নি।
শচীনের ভদ্র হবার একটাই কারন ছিল, ওর বাপ। যিনি ওর মাথার ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যে “তোমাকে কোটি কোটি মানুষ অনুসরণ করে, ওদের কারোর জন্যই ব্যাড এক্সাম্পল তৈরী করোনা।”
এই কারণেই সে কখনও বিড়ি সিগারেট, মদ জুয়ার মডেল হয়নি। কিন্তু বাকিরা কেউই টেন্ডুলকার না।

স্লেজিং কাকে বলে দেখতে চাইলে পাক-আফগান ম্যাচ দেখেন। মনে হবে কুস্তি দেখছি। বিশেষ করে নাসিম শাহ একেবারেই পার্সোনালি নেয়।
স্লেজিং করতো না হাশিম আমলা, করেনা মোহাম্মদ রিজওয়ান, বাবর আজম, আদিল রশিদ, মঈন আলীরা। বিষয়টা ধর্মীয়। তবে আগ্রাসন ঠিকই দেখান। সেই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থাকতেই হবে। নাহলে প্রফেশনাল স্পোর্টস আপনার না।
ভিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা স্লেজিংয়ের কারণেই পরিচিত। গালাগালি ছাড়া একটা বাক্য শেষ করতে পারেনা। নিজের সতীর্থদেরও গালি দিয়ে কথা বলে (চিটাগংয়ের ভাষায় “আবেগ”) প্রতিপক্ষকেতো খেয়েই ফেলে। কোহলি আমাদের রুবেলকে মা তুলে একটা গালি দিয়েছিল ২০১১এর বিশ্বকাপে। এখনও ইউটিউবে থাকার কথা। ধোনি মুস্তাফিজকে গুতা দিয়েছে, শাহীন আমাদের ব্যাটসম্যানের দিকে বল ছুঁড়ে মেরেছে ইত্যাদি বহু ঘটনা ভাইরাল হয়েছে। এইসবই খেলার অংশ। খেলা শেষে মাঠের বাইরে এরাই বন্ধু হয়ে যায়।
এখন কথা উঠছে তানজিম সাকিব কোহলিকে আউট করে ওই অঙ্গভঙ্গি করেছে।
প্রথমত, ভিরাট কোহলি কোন ফজলু বজলু না যে দিনে রাতে ইচ্ছা করলেই ওর উইকেট পাওয়া যায়। একটা বলার হয়তো গোটা ক্যারিয়ারে একবারই ওর উইকেট পায়। কাজেই এটি যেকোন বোলারের জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। ওতো আনন্দিত হবেই।
কোহলি সামনে এগিয়ে এসে ওকে বাউন্ডারি ছাড়া করতে এসেছিল, সাকিব সেই আগ্রাসী কোহলিকে বোল্ড আউট করেছে। এইটা আরেকটা পয়েন্ট। তোমার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তিপ্রয়োগে আগানো প্রতিপক্ষকে একদম মোক্ষমভাবে বধ করা হয়েছে। এটিও বিশাল কিছু। বাউন্ডারি লাইনে অলৌকিক ক্যাচে আউট করার সাথে এর যোজন যোজন পার্থক্য।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ও কি অশ্লীল কিছু করেছে? বলেছে? ফ্লিন্টফ যেমন ইয়ুভিকে বলেছিল ”দুষ্টু কাজ করি" বা এই জাতীয় কিছু? লিপ রিডাররা কি বলবেন? কোহলি নিজে কোন বিচার সভা বসিয়েছে? আম্পায়ার? ম্যাচ রেফারি? তাহলে বাঙ্গু পাবলিকের এত জ্বলে উঠার কারন কি? কোথায় গর্ব করবে যে “আমাদের দেশের ছেলে ইতিহাসের সর্বকালের সর্বসেরা ব্যাটারদের একজনের চোখে চোখ রেখে মোক্ষম জবাব দিয়েছে, সাবাশ ব্যাটা" তা না, আসছে চুশীলতা শেখাতে! “ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা…” দালালি একেবারে এপিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে!
ড মোহাম্মদ আমীন নামের এক ছাগলতো মিথ্যা বানোয়াট গল্প লিখে ভাইরাল হয়ে গেছে। ওর নাকি বিদেশী প্রফেসর তানজিম সাকিবের আচরণ দেখে ওকে শুয়োরের সাথে তুলনা করেছে। মূর্খ দালালটা আমাদের “বিদেশী প্রফেসর” চেনাতে এসেছে।
প্রথমত, এইটা চরম রেসিস্ট আচরণ। এই এক মন্তব্যেই ঐ প্রেফসরের চাকরি চলে যাবে। কেউ ইউনিভার্সিটি অফ অটোয়াতে খোঁজ নেন এরিক ম্যাথিউ নামের প্রফেসরের বিরুদ্ধে কমপ্লেন দেন যে সে ওর সহকর্মীকে এই কথা বলেছে, থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে।
আর দ্বিতীয়ত, উত্তর আমেরিকায় যেকোন স্পোর্টসে, ফুটবল হোক, বাস্কেটবল, বেসবল বা আইস হকি - কোথাওই সুশীলতা পাবেন না। “দুষ্ট কাজ" শব্দটা এখানে মুড়ি মুড়কির মতন ব্যবহার হয়।
তাই গাঞ্জা পাতার সাথে হেরোইনের ডোজ না নিলে কোন শিক্ষিত “প্রফেসর" এমন মন্তব্য করবে না। ওটা ঐ দালাল লেখকের নিজের মন্তব্য যা সেই প্রফেসরের নামে চালানোর চেষ্টা করেছে।
আমি খুবই অবাক হই এইটা দেখে যে আমাদের দেশ এত বছর ধরে ক্রিকেট খেললেও আমাদের দেশের একটা বিরাট অংশ পাকিস্তান ও ভারতের পদলেহন করে। কোহলিকে সাপোর্ট করতে, যেখানে ওর বিরুদ্ধে কোন অন্যায়ই হয়নি, যা খুবই স্বাভাবিক ক্রিকেট আচরণ, নিজের দেশের ছেলের বিরুদ্ধে চলে যাওয়া! কিভাবে সম্ভব?
এখন কিছু ছাগু আসবে ট্যাগ দিতে “পাকিস্তানী দালাল। রাজাকার ইত্যাদি।”
এই সমস্ত মূর্খদের ব্যাপারে বহু আগে থেকেই জিরো টলারেন্স নীতিতে চলি। হাত থাকতে মুখ ব্যবহার করিনা। এখানে আমার পয়েন্টই এইটা, যতখন পর্যন্ত অন্যায় হচ্ছেনা, ততক্ষন “বাংলাদেশ সবার আগে। সামনে কোহলি হোক, বা শাহীন শাহ, ম্যাটার করেনা।”
আমরা প্রবাসীরা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ইত্যাদি দেশে থেকে, ওদের নুন খেয়েও নিজের দেশের জন্য চিল্লায়ে গলা ফাটাই, আর এইসব আগাছাগুলি নিজ দেশে থেকে কিভাবে আরেকদেশের এতটা চাটাচাটি করতে পারে? ভিরাটের দিকে সামান্য চোখ রাঙ্গানি দিয়েছে, এতেই জ্বলে পুড়ে মরছে, আর হারমানপ্রীত যে আমাদের জ্যোতিদের “আম্পায়ারদের নিয়ে এসে উদযাপন করো, ওরাই তোমাদের জিতিয়েছে” বলে নোংরামি করেছিল, যেজন্য শাস্তিও পেয়েছিল এবং নিজের দেশেই সমালোচিত হয়েছিল, তখন এই প্রতিবাদী পোস্টগুলি কোথায় ছিল? তানজিম সাকিবের বিরুদ্ধে না ভিরাট, না রোহিত, না আম্পায়ার, না ম্যাচ রেফারি, না আইসিসি কিছু বলেছে, এদের বুকে কেন এত জ্বালা হে পাঞ্জাবিওয়ালা?
৭১এ রাজাকাররা যেমন পাকিস্তানী প্রভুদের খুশি করতে নিজের মা বোনদের তুলে নিয়ে ওদের কোলে তুলে দিয়েছিল, এরাও ইন্ডিয়াকে খুশি করতে একই কাজ করতে পিছপা হবে না। বলে দিচ্ছি, লিখে রাখতে পারেন।
বাংলাদেশের আফসোস, এখানে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইন্ডিয়া, পাকিস্তানের সমর্থকের ছড়াছড়ি, শুধু বাংলাদেশের সমর্থকই মাইনোরিটি।



Post from https://www.facebook.com/manzur.m.choudhury

No comments:

Post a Comment

বল্টু

  ●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...