Saturday, June 29, 2024

অভিমান

চার অক্ষরের এই শব্দটা যার উপর ভর করে,তাকে আর কোনোভাবেই ফেরানো যায় না। কিছু অভিমান হয়তো ভাঙে,কিন্তু যখন খুব কাছের মানুষের কাছ থেকে খুব বড় আঘাত পান,সেই অভিমান সহজে ভাঙে না। যাকে উদ্দেশ্য করে বলছি,তার বেলাতেও আজো দুই দশক পেরিয়ে গেলেও ভাঙে নি। আফসানা মিমিকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,আপনাদের পরবর্তী সময়ে কোন অভিনেত্রীকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা করেন,জবাবে মিমি বলেছিলেন যাকে নিয়ে বেশি প্রত্যাশা করি সে অভিনয় একেবারেই কম করেন। অভিনয় কম ই করতেন,বাবার নাটকের বাইরে কখনো অভিনয় করেন নি,তাও বেছে বেছে। সব মিলিয়ে বোধহয় গোটা দশেক কাজ ও হবে না,অথচ এই কাজগুলো দিয়েই তিনি চিরসবুজ হয়ে আছেন দর্শকদের মনে,হয়ে আছেন আক্ষেপ । কেন তাকে আর অভিনয়ে পাওয়া গেল না,এই নিয়ে রয়েছে দীর্ঘ আফসোস,তিনি সবার প্রিয় সেই মিষ্টি হাসির মিষ্টি কন্যা কঙ্কাবতী শীলা আহমেদ।

আজ রবিবারের কঙ্কা,যার মাধ্যমেই শুরু হয় এই জনপ্রিয় ধারাবাহিক। এই কঙ্কা চরিত্রটির মধ্য দিয়েই একে একে অন্যান্য চরিত্রগুলোর পরিচিতি ঘটে। পুরো ধারাবাহিকে কঙ্কার প্রানবন্ত সারল্য উপস্থিতি যে কাউকে মুগ্ধ হতে বাধ্য,আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি কঙ্কার প্রেমে পড়েন নি এমন তরুণ বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ রবিবারের কঙ্কা হয়েই বড়বেলায় এসে পর্দায় হাজির হন শীলা আহমেদ,আর এসেই বাজিমাৎ। শুধুমাত্র এই কাজটি দিয়েই সে দর্শকদের কাছে আজীবন মনে থাকবেন।
ছোটবেলা থেকেই শীলা আহমেদের জনপ্রিয়তা। বাবা বিখ্যাত সাহিত্যিক ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ। বহুব্রীহি ধারাবাহিকে গায়ে হলুদের এক অনুষ্ঠানে স্বল্প মিনিটের উপস্থিতি দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক,অয়োময়তে ছিল বাবার হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নকন্যা। তবে পরিচিতি বাড়তে থাকে প্রিয় পদরেখা,অচিন বৃক্ষ নাটকের প্রচারের পর থেকে। এরপর তো ইতিহাস সৃষ্টিকারী কোথাও কেউ নেইতে 'লীনা' চরিত্রে ছোট্ট মেয়ের সারল্য অভিনয়,এত এত দাপুটে অভিনয়শিল্পী থাকার পরেও নজর কেড়ে নেন।
'আগুণের পরশমণি',তার জন্য নিয়ে এলো বিশেষ কিছু। বাবার পরিচালনায় প্রথম ছবি। ঢাকা শহরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আটকে পড়া এক পরিবারের ছোট কন্যা অপলা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। যারা এই ছবিটি দেখেছেন তাদের কাছে আলাদা করে কিছুই বলবার নেই। আমার দেখা অন্যতম সেরা শিশুশিল্পী তিনি,অপলা চরিত্রটি আমার মনে সব সময় গেঁথে থাকবে,আমার বিশ্বাস সবার ই থাকবে। চরিত্রটা যেমন অসাধারণ,তেমনি অসাধারণ অভিনয়ে জিতে নেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। একটিমাত্র সিনেমা,আর তাতেই জাতীয় পুরস্কার পেয়ে আজো ইতিহাসে উজ্জ্বল।
উইজা বোর্ড,হিমু, নক্ষত্রের রাতের পলিনের পর তো আজ রবিবার করলেন। কাছাকাছি সময়ে নিমফুল ও করলেন,সঙ্গে ক্লোজআপের বিজ্ঞাপন। শীলা আহমেদ তখন হয়ে উঠছে নতুন প্রজন্মের উদীয়মান অভিনেত্রী,তাকে নিয়ে প্রত্যাশা প্রচুর।সর্বশেষ খোয়াবনগরে খোয়াব কন্যার অভিনয়।
এরপর অভিনেত্রী হিসেবে বিদায় ঘটলো শীলা আহমেদ। এমনিতেই অভিনয় কম করতেন,বাবার এক কঠিন সিদ্ধান্তে নিজেকে মেনে নিতে না পেরে অভিমানে অভিনয় টাই ছেড়ে দিয়ে আড়ালে চলে গেলেন। আর অভিনয়ে আসেন নি। বাবার প্রতি তার অনেক অভিমান,এমনকি নিজের বিয়ের সংবাদ ও বাবাকে জানান নি। তবে বাবা উপস্থিত হয়েছিলেন তার প্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদারকে নিয়ে। শীলার এই গুটিয়ে যাওয়া নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের খুব দুঃখবোধ ছিল, তাই হয়তো বলেছিলেন শীলা জেনে গেল পৃথিবীতে খারাপ বাবাও আছে।

©হৃদয় সাহা
source: https://www.facebook.com/100035350046576/posts/1137344567453867/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

No comments:

Post a Comment

বল্টু

  ●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...