Monday, June 24, 2024

আম্মার হাসি শুনে আমি চোখ মুছি

 “আমার বাসায় প্রথম যখন এসি লাগালাম আমার জ্বালাপোড়া গেলো আরো বেড়ে।

বউ বাচ্চা গ্রীষ্মের এই দাবদাহে গায়ে কাথা দিয়ে এসিতে ঘুমাচ্ছে, এটা খুবই শান্তির একটা দৃশ্য। কিন্তু আমি শান্তি পেতাম না। এদিকে শীতল বাতাসে আমার গায়ে কাটা কাটা দিচ্ছে ওদিকে গ্রামে আমার মা গরমে সিদ্ধ হচ্ছে। আমার গা ঠান্ডা হচ্ছিল ঠিকই কিন্তু অন্তর পুড়ে ছাই।
আমি চাইলেই আম্মাকে একটা এসি কিনে দিতে পারি কিন্তু আম্মা সেটা নেবে না। এটা আম্মার কাছে বিলাসিতা। অবশ্য বিলাসিতা হবেই না কেন, খুব খারাপ অবস্থা থেকে উঠে এসেছি আমরা।
ছোট বেলায় নানা বাড়ির টিনের ঘরে কেটেছে আমার শৈশব। আম্মা প্রাইমারি স্কুল টিচার। ঘরে চারদিকে যে পিলারগুলো ছিল সেগুলো ছিল আস্ত গাছের। তাও ঘুনে খাওয়া। যখন তুফান আসতো, আমাকে চৌকির নিচে বিছানা পেতে দিতো। যদি ঘর ভেঙ্গে যায় এই আশংকায়।
রাতে বিছানা বোধয় আমি একটু বেশিই ভিজাতাম। ছোট বেলায় ডায়াবেটিস ছিল মনে হয়। বিছানা ভেজানোর পর আম্মা ওখানটায় গিয়ে আমাকে শুকনাতে রাখতো। আর পাখা বলতে ছিল সুপারি গাছের খোল। অনেক পরে আমাদের ঘরে ফ্যান এসেছে।
আম্মার সব কিছু ছিলো আমি কেন্দ্রিক। ঈদের শপিং বলতে আমার জন্য কেনাকাটা। নিজের জন্য কিছু কিনতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
সেই মা গরমে কষ্ট পাবে আর আমি ঢাকায় কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাব সেটা কি হতে পারে?
গত বছর এমন সময় একদিন রাতের বেলায় ঢাকা থেকে একটা এসি আর ইলেকট্রিশিয়ান নিয়ে রওয়ানা দিলাম। টার্গেট আম্মা যখন ঘুমিয়ে থাকবে, রাতেই কাজ শেষ করে ঢাকায় ফিরব।
আম্মা রাতেই টের পেয়ে গিয়েছিল। শুধু ঝাড়ু দিয়ে দৌড়ানী দেয়া বাকী রেখেছে আমাকে।
গ্রামে এগুলা কেউ লাগায়? আশে পাশে চার বাড়িতে কারো এসি আছে? শুধু শুধু এত্তগুলা টাকা নষ্ট। ফুটানী।
আমি শুধু বলেছি, আম্মা আপনার পায়ের নিচে আমার বেহেশত। আমার বেহেশত গরমে কষ্ট পেলে আমিতো দোযখে পুড়তে থাকি। আপনি কষ্ট পেলেতো আমার এই দুনিয়া ওই দুনিয়া; দুই দুনিয়াই শেষ। এই মেশিনটা আপনার জন্য না, আমার জন্যই লাগিয়ে গেলাম। আমার বেহেশতের জন্য।
এক বছর পর আজকে আম্মা ফোন দিলো। বাজান, এই রোজা রমজানে ঐ টা না থাকলে কি যে কষ্ট হতো। স্কুল থেকে ঘেমে ফিরে যখন এটার নিচে বসি, ঠান্ডা হয়ে যাই। সারাদিন এটা চালিয়ে কোরআন শরীফ পড়ি। জায়নামাজে বসে তোমার জন্য মন থেকে অটো দোয়া চলে আসে।
আমিও একটু মুরব্বী ভাব নিয়ে বললাম, একটা বয়সে মা হয়ে যায় সন্তান আর ছেলে হয়ে যায় বাবা। এরপর থেকে আমি যেসব ডিসিশন নেব বাবার আদেশ মনে করে সব মেনে নেবেন।
আম্মা ঐ প্রান্ত থেকে হাসে। আম্মার হাসি শুনে এদিকে আমি চোখ মুছি।

source: https://www.facebook.com/100027072645223/posts/1530462074532866/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

No comments:

Post a Comment

বল্টু

  ●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...