Saturday, September 28, 2024

নীরদ সি চৌধুরী

 একবার এক বাংলা দৈনিকে বিখ্যাত বাঙালি মনীষীদের একটি নামের তালিকা প্রস্তুত করলেন নীরদ সি চৌধুরী। আশ্চর্যের বিষয় বিদ্যাসাগর কে তালিকায় রাখলেন না। প্রবল বিতর্কের ঝড় উঠল নীরদচন্দ্র নিজের যুক্তি দিলেন ,সেই যুক্তি মোটেও বাঙালি মান্যতা দেয়নি। একশোর বেশি বছর বেঁচেও নীরদ সি চৌধুরী কোনওদিন বাঙালির আপনজন হতে পারেন নি।

© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
নীরদ সি চৌধুরী আপাদমস্তক ব্রিটিশ ভক্ত। আর সেকারণেই তাঁর দিকে ধেয়ে এসেছে অনেক সমালোচনা। তিনি সাম্রাজ্যবাদীদের শেষ সমর্থক, ব্রিটিশভক্ত দালাল ইত্যাদি । সত্যিই তো তিনি 'অটোবায়োগ্ৰাফি অফ অ্যান আননোন ইন্ডিয়ান'এ ইংরেজদের প্রশস্তি করেছেন ।সরকারি চাকরি থেকে একসময় বরখাস্ত হয়েছেন ।বাঙালি সম্পর্কে ভয়ঙ্কর কথা লিখেছেন ‘বাঙালী থাকিব নাকি মানুষ হইব’।
সমসাময়িক সমালোচকরা বলেন নীরদচন্দ্র অসম্ভব পণ্ডিত মানুষ, কিন্তু ভয়ঙ্কর উন্নাসিক। নিজেকে সকলের থেকে আলাদা দেখানোর একটা বিচিত্র মানসিকতা তাঁকে সারাজীবন তাড়া করে বেরিয়েছে।
সত্যি কী তাই? তাঁর বন্ধুরা কি বলছেন তাঁর সম্বন্ধে?
সাংবাদিক, সম্পাদক,পরিমল গোস্বামীর বক্তব্য নীরদ সি চৌধুরীর মত খুঁতখুঁতে এবং পছন্দ অপছন্দের এমন প্রবণতা কারও মধ্যে তিনি দেখেন নি।মনে প্রাণে ইংরেজ ধর্মী।ইংরেজ জীবনের যা কিছু শ্রেষ্ঠ তাকে আদর্শ জেনে সব কিছু বিচার করতেন। ইংরেজি ছাড়াও ফরাসী,জার্মান ভাষা খুব ভাল জানতেন। তিনি সত্যিই অনেক জানতেন। সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান, সঙ্গীত, ইতিহাস, ভূগোলের সব তথ্য তাঁর জানা ছিল কেবল নয় সব বিষয়ে স্বাধীন চিন্তা ও নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতেন দৃঢ় ভাবে । পরিমল গোস্বামীর মতে নীরদবাবুর মত 'স্পেশালিষ্ট ইন জেনারেল নলেজ ' কল্পনা করা শুধু ভারতে নয় দুঃসাধ্য ছিল বিদেশেও।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
সত্যি বলতে নীরদচন্দ্র যেমন বুঝেছেন, তেমন লিখেছেন। কী ব্রিটিশ কী ভারতীয়। ফলে দু’দেশেই যেমন তিনি পুরস্কার পেয়েছেন তেমন তাঁর কপালে তিরস্কার জুটেছে। একসময কোনও স্থায়ী চাকরি করতেন না। এদিক ওদিক পত্র পত্রিকায় ছিটেফোঁটা লিখে সামান্য উপার্জন। প্রায় সবটাই চলে যেত পাশ্চাত্য সঙ্গীতের রেকর্ড আর বইপত্র কিনতে। সংসারে টানাটানি। হাত পড়েছে স্ত্রীর গয়নাতেও। পরে কখনও আর্মি অ্যাকাউন্টস বিভাগে, কখনও বা শরৎচন্দ্র বসুর সচিব রূপে, আবার কখনও অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে যুদ্ধের ভাষ্যকারের চাকরি করেছেন।নীরদচন্দ্র খুব জাঁক করে বলতেন, “এক বর্ণ ইংরেজিও আমি কোনও ইংরেজের কাছে শিখি নাই। যা শিখিয়াছি সবই গ্রামের পাঠশালার গুরুমশাইদের কাছ থেকে।”
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ' পথের পাঁচালী ' প্রকাশের জন্য প্রকাশক পাওয়া যাচ্ছে না। উদ্যোগ ছিল নীরদ সি চৌধুরীর। সজনীকান্ত দাস ঘোষণা করলেন 'পথের পাঁচালী 'তিনি প্রকাশ করবেন। কপিরাইট হিসেবে তখন বাংলা বইয়ের লেখকরা পেতেন পঁচিশ -তিরিশ টাকা। রত্ন চিনতে সজনীকান্তের ভুল হয় নি। অনুভব করতে পেরেছিলেন নীরদ সি চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের অমর কৃতিত্ব স্থাপন করেছেন।'পথের পাঁচালী'র কপিরাইট হিসেবে বিভূতিভূষণ কে দেওয়া হয় তিন শত টাকা। ২ অক্টোবর ১৯২৯ বুধবার প্রকাশিত হল 'পথের পাঁচালী ' লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক সজনীকান্ত দাস।সেই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন লেখক স্বয়ং। বিভূতিভূষণের ডায়েরীতে লেখা আছে। "২৮শে জুলাই, ১৯২৯ রবিবার.... এই বইখানার আর্ট অনেকেই ঠিক বুঝতে না পেরে ভুল করেন।দেখে ভারী আনন্দ হলো সজনী কাল কিন্তু আর্টের ধারাটা আমার বুঝে ফেলেছে।আর্টকে বুদ্ধির চেয়ে হৃদয় দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলে বোঝা যায় বেশী"।
পরিমল গোস্বামী ,নীরদ সি চৌধুরীর সম্পর্কে লিখেছেন বন্ধু -ঘনিষ্ঠরা কোনও বিষয়ে জানতে দ্বিধা না করে নীরদ সি চৌধুরীর কাছে যেতে পারতেন। তিনি যেমন সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন , তেমন ঘনিষ্ঠ ছিলেন সজনীকান্ত দাস,পরিমল গোস্বামীর। আজ নীরদ সি চৌধুরীর প্রয়াণ দিবস।
কলমে ✍🏻 অরুণাভ সেন।।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে

No comments:

Post a Comment

বল্টু

  ●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...