Saturday, September 7, 2024

বই বিজনেস

 আমার বান্ধবী নুসরাতের ঠিকানায় কেউ একজন দশটা বই পাঠিয়েছে। চিরকুটে লেখা, ‘বইমেলা থেকে তোমার প্রিয় কিছু বই পাঠালাম।’

নুসরাত সেই বই নিয়ে ঝামেলায় পড়ছে। বাসায় নিলে সমস্যা। অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। বাধ্য হয়ে সে বইগুলো আমার কাছে রাখতে দিলো।
পরের দিন নুসরাত আবার আমাকে ডেকে নিয়ে বললো, ‘দোস্ত আজকেও কুরিয়ার অফিস থেকে কিছু বই আসবে। তুই প্লিজ রিসিভ করে তোর বাসায় নিয়ে নে।’
যথা সময়ে আমি রাস্তার মোড়ে গেলাম। দেখি কুরিয়ারের এক লোকের হাতে কাগজে মুড়ানো চারটা বইয়ের গাট্টি। কোরিয়ার লোক জাস্ট অবাক হয়ে বললো, ‘ভাই সাব, এই এক নুসরাতের ঠিকানায় ঢাকা,চট্টগ্রাম, খুলনা সব জায়গা থেকে বই আসে কেমনে? উনি কী বইয়ের ডিলার নাকি?’
আমি কিছু বললাম না। বাসায় এসে বইগুলো খুললাম। আজকে মোট ৪৫টা বই। সাথে কয়েকটা নীল খামের চিরকুটও। একটায় লেখা, ‘এই যে, বইপড়ুয়া মেয়ে, তোমার না অনেক বই পড়ার শখ, একটুখানি ভালোবাসা দিলাম। তোমার শখ পূরণ করাই আমার নেশা।’ আহ কী সুন্দর ভালোবাসা।
আজকে দেখি হঠাৎ আমার ফেসবুক পরিচিত এক বড় ভাই নক দিয়ে বললেন, ‘ ছোট ভাই, তোমার বাসা সুনামগঞ্জ না? তোমার ঠিকানায় কিছু বই যাবে। ঐ বইগুলো একজনকে দিও। মানুষটা তোমার জেলার। ওরে আমি সারপ্রাইজ দিতে চাই। প্লিজ এতটুকু কষ্ট করো। কোরিয়ারে দিলে মেয়েটা জেনে যাবে।’
তারপর সব তথ্য নিয়ে বুঝলাম, বইগুলো নুসরাতকে দিতে হবে। অথচ এই ভাইকে আমি চিনি। উনি তিন বছর আগে একবার বলছিলেন, আমাকে বই উপহার দিবেন। তারপর থেকে নাকি উনি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছেন। উনার অর্থনীতির চাকা নাকি ধ্বসে গেছে। এখনো সেই ক্ষতি কাটায়ে ওঠতে পারেন নাই। এদিকে নুসরাতকে উনি সব মিলিয়ে ১৫টা বই উপহার দিছেন। কী অদ্ভুত এসব বড় ভাইয়েরা।
যাইহোক, এসব বড় ভাইদের কারণে নুসরাত আর আমার ‘আপনার বইঘর’ নামক একটা অনলাইন বুকশপ চালু হয়ে গেছে। আমাদের সংগ্রহে এখন ২০০+ বই আছে। ভালোই চলছে আমাদের বই ব্যবসা।
এই পুরো প্লানটা আমার। যখন দেখলাম ফেসবুকের বই পড়ুয়া ভাইয়েরা সুন্দ্রী মেয়ে দেখে বই উপহার দেন, তখন আমি নুসরাতের দ্বারস্থ হই। নুসরাত এসব কাজে অনেক পটু। এই চমৎকার বিজনেস আইডিয়া ওকে বুঝিয়ে বলি।
তারপর নুসরাত ফেসবুকে নতুন একটা আইডি খুলে বই পড়ুয়া মেয়ে সাজে। সে আইডির পাসওয়ার্ড আমার কাছেও আছে। যেহেতু নুসরাত জীবনেও বই পড়ে নাই, তাই আমি প্রতিদিন ঐ আইডির টাইমলাইনে বা বিভিন্ন গ্রুপে বই সম্পর্কে পোস্ট দিয়ে জানিয়ে দেই, নুসরাত কত বড় মাপের বইপড়ুয়া।
আরো কত আবেগপ্রবণ পোস্ট দেই, যেমন ‘মেয়ে হয়ে জন্ম নিছি। টাকা কামাতে পারি না তো কী! পিডিএফ পড়েও শত শত বই পড়া যায়। একদিন অনেক টাকা হবে আমার। অনেক বই কিনবো সেদিন।’ সেসব আবেগপ্লুত পোস্ট দেখে নুসরাতের ইনবক্সে মানবতার ঢুল বাজাতে বাজাতে এসে হাজির হোন, ফেসবুকের বই লাভার ওরফে মেয়ে পটানো সিম্প ভাইগুলো। তারা জানিয়ে দেন, বই পড়া এবং বই গিফট দেওয়া তাদের নেশা। এসব কথা বলার সময় আবেগে তাদের গলা বুঁজে আসে।
পরিশিষ্ট : এখন থেকে নুসরাতকে যারা বই গিফট দিতে চাচ্ছে, তাদেরকে নুসরাত বলছে, বই উপহার দিলে যাতে ‘আপনার বইঘর’ নামক বুকশপ থেকে দেয়। ওখানে কালেকশন ভালো। কুরিয়ারও কম রাখে ওরা।
আলহামদুলিল্লাহ অলরেডি দুই ভাই নুসরাতের নামে বই অর্ডার করেছেন। কোনো কুরিয়ার চার্জ না ধরায় উনারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশও করেছেন। মানে, আমাদের বুকশপ থেকে বই কিনে আমাদেরকেই গিফট করা হচ্ছে। এই বিজনেস লস খাবে কেমনে? আমাদের উন্নতি এখন চোখে পড়ার মতো। দোয়া করবেন সবাই।

হাসান মাহমুদ ইমন
source: https://www.facebook.com/61556672572653/posts/122169144434222419/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

No comments:

Post a Comment

বল্টু

  ●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...