Saturday, June 29, 2024

এ পি জে আব্দুল কালাম

 অন্য এক সাধু এবং প্রার্থনার গল্প।

Mohammad Abu Hanefa


এ পি জে আব্দুল কালামকে নিয়ে আমার আগ্রহ অনেকদিনের। তাঁর লিখা প্রায় সব বই পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। মাস তিনেক আগে পড়ছিলাম তাঁর 'টার্নিং পয়েন্টস'। এয়ারপোর্টে। খুব ভোরের ফ্লাইট। কিন্তু লেইট। কবে ছাড়বে বোঝা যাচ্ছেনা। আমার সময় কাটছে 'টার্নিং পয়েন্টস' নিয়ে। পাশে এক ভদ্রলোক বসা। বেশ সজ্জন।হঠাৎ নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলেন, কালাম সাহেব জীবনের টার্নিংগুলো দেখেছেন?? কী টান টান!! এন্ড হি ওয়াজ আ গিফটেড পারসন।
বললাম, হা, নয়তো, মাঝির সন্তান থেকে এত বড় বিজ্ঞানী, তারপর ভারতের রাষ্ট্রপতি ---------
উত্তর এলো, বিজ্ঞানী কালাম, রাষ্ট্রপতি কালাম, আঠারোটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা পদক পাওয়া কালাম, আটটি ডক্টরেট পাওয়া কালামকে বুঝতে হলে শুধু তাঁর নিজের লেখা বই পড়লে হবে না।
মানে বুঝলাম না- একটু অবাক হই।
না, মানে, বড় মানুষেরা নিজেদের 'বড়ত্ব' নিজের লেখা বইতে কখনো লিখেন না।কালাম আসলে যতোটা না বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রপতি , শিক্ষাবিদ , তার চাইতে বেশী হচ্ছেন একজন সাধু। আ রিয়েল সেইন্ট।
কীভাবে???
তিনি হাসলেন, তিনটা বই এর নাম লিখুন,
১। The Kalam Effect: My Years With The President by P M Nair.
২।What Can I Give?: Life lessons from My Teacher - Dr A.P.J. Abdul Kalam – Srijan Pal Singh
৩।A P J Abdul Kalam- A Life---Arun Tiwari
তারপর বললেন এগুলো পড়লে বুঝবেন।
এভাবেই ইরতিয়াজ ভাই এর সাথে পরিচয়। লন্ডন থাকেন। একটা ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে কাজ করেন। বড় ধরণের কাজ, সেটা বিজনেস কার্ড বলছে।
বাতিঘরে'র অসাধ্য কিছুই নেই। তাঁরা ক'দিন আগে আউট অব প্রিন্ট একটি বই, গাদ্দাফির ব্যক্তিগত পাইলটের লিখা-- বিলেতের পুরানো বই এর দোকান থেকে এনে দিয়েছেন। তাঁদের জন্য তো এ তিনটা বই কোন ব্যাপারই না।
গত দু'মাস এ তিন বই নিয়ে ডুব মারলাম। সবচে, কষ্ট দিলো শেষেরটা।লেখক অরুণ তেওয়ারি ছিলেন ড. কালামের বিজ্ঞানী সহকর্মী। তাই এতে তিনি তাঁর গুরুর বৈজ্ঞানিক কাজের বিস্তারিত লিখেছেন, দাঁত ভাংগা সায়েন্স।এর মধ্য থেকে পরিস্কার হয়ে আসছেন, 'সাধু" ড. কালাম। একদিকে তিনি মিজাইল বানাচ্ছেন, অন্যদিকে বানাচ্ছেন পোলিও আক্রান্ত বাচ্চাদের জন্য সহজলভ্য কৃত্রিম পা। বাকী দুটো বই বেশ সহজ।
তিনটা বই শেষ করে ইরতিয়াজ ভাইকে ইনবক্স করলাম, "দা সেইন্ট ইজ ডিসকভার্ড।"
তিনি জবাব দিলেন,হোয়াট ইম্প্রেসড ইউ মোস্ট?
আমি লিখলাম,২০০৬ সালে 'প্রমুখ স্বামী মহারাজের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ ।
এত কিছু বাদ দিয়ে ওটা কেন?? ইরতিয়াজ ভাই এর বিস্মিত ইনবক্স।
কারণ তাঁর প্রার্থনা, আমার ছোট্ট উত্তর।
কী প্রার্থনা?? প্লিজ মনে করিয়ে দিন।
সে রাতে তিনি স্বামীজীর কাছে আবেদন করেছিলেন, 'আপনি প্রার্থনা করুন, আমি যেন ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে বক্তৃতা দিতে দিতে মারা যাই।"
নয় বছর পর, ২৭ জুলাই,২০১৫ সালে শিলং এ ছাত্রদের সামনে বক্তৃতা দেয়ার সময়ই ড. কালাম হৃদ যন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যান।
কিন্তু এটা কেন আপনাকে এত টানলো, তাঁর অন্য সব ছেড়ে??? ইরতিয়াজ ভাই এর প্রবল বিস্ময়।
কারণ, আমি অতি তুচ্ছ মানুষ, কিন্তু সব মানুষের প্রভুর কাছে চাইবার অধিকার সমান। প্রেসিডেন্ট কালামের যে অধিকার, আমার ও তাই। পরম করুণাময়ের কাছে সবাই সমান।
তারপর??? ইরতিয়াজ ভাই এর তাৎক্ষণিক ইনবক্স।
আমি ছোট, অতি নগন্য হলেও এটা পড়ার পর আমার মনে হয়েছে, যে বয়সেই হোক, আমি যেন আই হ্যাভ আ ড্রিম অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে কথা বলতে বলতে চলে যাই!!!!!!

source: https://www.facebook.com/groups/905458924023335/permalink/991139732121920/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

পিরামিড রহস্য


পিরামিডের নির্মাতা কে হতে পারে এ বিষয়ে এটা আমাদের মাথায় আসার আগে পিরামিনড টা কি ভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল এ সম্পর্কে আমাদের ধারণা মাথায় থাকা দরকার।
নম্বর ১
বড় পিরামিড যেটাকে খুফর বলা হয় এটা নির্মাণ করতে ২৩ লক্ষ্য ব্লক ব্যবহার করা হয়েছিল এর সর্বনিম্ন ছোট ব্লকটির ওজন ২৭ হাজার কেজি।
এক একটা ব্লকের ওজন ২৭ হাজার কিলোগ্রাম থেকে নিয়ে ৭০ হাজার কিলো গ্রাম পর্যন্ত ছিল।
নম্বর ২
এ ব্লক বা পাথরের টুকরাগুলো যেভাবে ফিনিশিং করা হয়েছে কাটা হয়েছে এটা অত্যাধুনিক জামানার লোহা কাটা মেশিন এর মাধ্যমেও সম্ভব নয়।
নম্বর ৩
আমরা জানি মিশরিয়রাই সর্বপ্রথম জ্যামিতি আবিষ্কার করেন, কিন্তু আজ থেকে ৫০০ বছর আগে আধুনিক জ্যামিতির আবিষ্কার হয়। অথচ অত্যন্ত সুনিপুণ হাতে জ্যামিতি ব্যবহার করে পিরামিডগুলো নির্মাণ করা হয়েছে ।খুফুর পিরামিডের সাথে তিনটি পিরামিড তিনটি তারকাকে লক্ষ্য করে।
নম্বর ৪
মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় সব সময় দেখা যায় যে লু হাওয়া অত্যন্ত বেশি তাপমাত্রা কিন্তু পিরামিডের মধ্যে সব সময় বিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা মানে এয়ারকন্ডিশন এসি।
নাম্বার ৫
এ পিরামিড গুলো আজ থেকে চার-পাঁচ হাজার বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে কি রড বালু সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে যে ৪০০০ বছরেও সেটা স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে অথচ বর্তমান অত্যাধুনিক জামানার রড সিমেন্টের বিল্ডিং সর্বোচ্চ 150 বছর টেকশই হয় ।
নাম্বার ৬
এ পিরামিডগুলো যখন আবিষ্কার করা হয় তখনকার মানুষের হাইট ছিল সর্বোচ্চ ১০ ফিট বর্তমান ফেরাউনের লাশ এখনো মিশরে অক্ষত আছে যার দৈর্ঘ্য ৮ ফিটের উপরে নয়। (ধরলাম, মনে করলাম, সর্বোচ্চ 20 ফিট) এতো কম হাইটের মানুষ কিভাবে এত বড়ো পাথর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে আসবে ? এই খুফুর পিরামিড ছিল ৪২ তলা বিল্ডিং এর সমান 1889 সালে আইফেল টাওয়ারের পূর্ব পর্যন্ত এ চার হাজার বছর এই পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ স্থাপনা ছিল পিরামিড। এত বড় বড় পাথরের টুকরা গুলো এত উপরে এতো কম হাইটের মানুষের পক্ষে কিভাবে স্থাপন করা সম্ভব হয়েছিল ⁉️🤔
নম্বর ৭
পিরামিড নির্মাণের পর পরবর্তী প্রজন্ম থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন বিজ্ঞানী কোন ব্যক্তি খুঁজে পাইনি পিরামিডে ব্যবহৃত পাথরগুলো ঠিক কোথায় থেকে কিভাবে নিয়ে আসা হয়েছিল।
নাম্বার ৮
পিরামিডের মধ্যে কি আছে কেন নির্মাণ করা হয়েছিল এত অর্থবহুল ভাবে এটা যাচাইয়ের জন্য অত্যাধুনিক জামানায় বিজ্ঞানীরা ভেতরে প্রবেশ করার জন্য অনেক চেষ্টা চালিয়েছে সর্বশেষ ক্যামেরা পাঠিয়েছে ডানে বামে দুই একটি ছবি তোলার পর ক্যামেরাটি অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেছে তারপর থেকে নিয়ে সেখানকার সরকার প্রশাসন গবেষণা নিষিদ্ধ করেছে।
তাহলে ক্যামেরাটি বন্ধ করলো কে⁉️ ভেতরে কারা আছে কি করছে তারা বাহিরের মানুষকে তাদের বিষয় সম্পর্কে জানতে দিচ্ছে না🤔
নাম্বার ৯
আমেরিকা পিরামিডের দেশ নয় পিরামিড তাদের প্রতীক নয় অথচ ওয়ান ডলারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে পিরামিডের ছবি এবং মাথার উপর দেখা যাচ্ছে একটি চোখ 🤔
কি এর রহস্য পিরামিড নির্মাতার দিকে ইঙ্গিত করছে না তো⁉️
নম্বর ১০
বর্তমান অত্যাধুনিক জামানা তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নাসার বিজ্ঞানীরা ভিনগ্রহেএলিয়েনের সন্ধ্যান পেয়েছে বলে আত্মতৃপ্তির শেষ নেই মনে হচ্ছে পুরো মহাবিশ্বের তথ্য হাতে মুঠোয় আনতে পেরেছে অথচ এর পেছনেও তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রমাণাদি নেই । অথচ আজ থেকে চার হাজার বছর আগে নির্মিত পিরামিডের দেয়ালে এলিয়েনের চিত্রঅঙ্কন করলো কে⁉️
বর্তমান আধুনিক জামানায় বিদ্যুতের আবিষ্কার হলো অথচ চার হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন যুগে হেলিকপ্টার ও বৈদ্যুতিক বাল্বের ছবি কে কিভাবে পিরামিডের দেয়ালে অঙ্কন করল ⁉️
কে জানত তখন থেকে ৪ হাজার বছর পর সাবমেরিন এর আবিষ্কার হবে আর সে সাবমেরিন 4000 বছর পূর্বেই পিরামিডের দেয়ালে অঙ্কন করল ⁉️
বিবেকের চশমা দিয়ে দেখতে থাকুন ভাবতে থাকুন সব উত্তর এসে যাবে।
ভাই মিশরীয় সভ্যতা অনেক উন্নত ছিলো তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা অনেক উন্নত করেছিলেন অনেক উন্নত বানিয়েছিলেন কিন্তু তারা আল্লাহকে মেনে চলেনি এজন্য তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। আমরা তাদের এক দশমাংস উন্নত হতে পারিনি। মানে দশের এক অংশও উন্নত হতে পারিনি।
Allah Subhanahu Wa Ta'ala said:
"তাদের পূর্ববর্তীরাও (সত্যকে) মিথ্যে বলে অস্বীকার করেছিল। আমি তাদেরকে যা দিয়েছিলাম, এরা তার এক দশমাংশও পায়নি। তবুও ওরা যখন আমার রসূলগণকে অস্বীকার করেছিল তখন কত ভয়ংকর হয়েছিল আমার শাস্তি।"
(QS. Surah Saba' chapter 34: Verse 45)
সংগৃহীত তথ্য।

source: https://www.facebook.com/100069422742897/posts/785268620463889/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুস

৮০৯ ম্যাচ। ১৭০৭ উইকেট!

ওপরের সংখ্যাগুলো দেখার পর আর কিচ্ছুটি বলার দরকার নেই। একেবারে কিচ্ছুটি না। দু জন বোলার নিজেদের মধ্যে ১৭০৭টি আর্ন্তজাতিক উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এরপর আর একবারও মুখ ফুটে বলার দরকার নেই যে, তারা এই ক্রিকেট দুনিয়ার ইতিহাসের সফলতম বোলিং জুটি।
আসলে ‘সফলতম’ বললে ঠিক বোঝা যায় না। ইংরেজি শব্দ টেনে বলা উচিত-লেথাল। হ্যাঁ, দুনিয়ার সবচেয়ে ঘাতক পেস বোলিং জুটি ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুস।
শন পোলক বলেছেন, ‘সর্বকালের সেরা? অবশ্যই ওয়াসিম ও ওয়াকারের জুটি। কী উইকেটে খেলা হচ্ছে, সেটা ব্যাপার না। তারা তাদের স্কিল দিয়ে সেটা জয় করে নিতে পারতেন। বিশ্বসেরা জুটি বেছে নিতে হলে আমি তাঁদেরই বেছে নেবো।’
ওয়াসিম-ওয়াকারের গল্প বলতে বসলে তো ছোটখাটো একটা মহাকাব্য হয়ে যাবে। ফলে দু’জনের সাফল্য নিয়ে কথা না হয় আজকের মতো তোলা থাক। আজ বরং এই দুই কিংবদন্তির সম্পর্ক নিয়ে আলাপ করা যাক। আলাপ করা যাক দু’জনের বন্ধুত্ব নিয়ে।
কী বিশ্বাস হচ্ছে না?
যারা ইদানিংকালের খোজখবর রাখেন, তাঁদের কাছে ওয়াসিম-ওয়াকার কেবলই দু’জন ‘শত্রু’। তারা একে অপরের সাথে খুব একটা দায়ে না পড়লে কথা বলেন না, পরষ্পরের সামনে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না; এমনকি একসাথে কাজ করার প্রস্তাব পেলেও ফিরিয়ে দেন। কিন্তু চিরটাকাল এমন ছিলো না গল্পটা। একসময় তাঁরা দু’জন ছিলেন দুই দেহ এক প্রাণের বন্ধু।
মাঠে জুটি করার পাশাপাশি মাঠের বাইরে ওয়াসিম-ওয়াকার খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠলেন। ওয়াকারের প্রতি ওয়াসিমের তখনকার স্নেহটা ছিলো ভাতৃসূলভ। দু’জন হোটেল রুমে, ড্রেসিংরুমে ক্রিকেট এবং ক্রিকেটের বাইরের বিষয় নিয়ে সমানে আড্ডা দিতেন। এমনকি বিদেশ সফরে একসাথে ঘুরতেও দেখা যেতো তাদের।
পাকিস্তানী গ্রেট পেসার মুদাসসর নজর বলেছেন নব্বই দশকের মাঝামাঝি দু’জনের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। ঠিক কী নিয়ে দু জনের মধ্যে মনোমালিন্য ছিলো, এ কখনো জানা যায়নি। তবে লেখকরা মনে করেন, মূলত ইগোর লড়াই থেকেই এই টানাপোড়েন। দু জনই টের পাচ্ছিলেন যে, পরষ্পরকে তারকা হিসেবে দু জন ছাড়িয়ে যাচ্ছেন।
প্রথম প্রকাশ্যে সমস্যা হয়েছিলো ১৯৯৩ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। ওয়াসিম তখন প্রথম অধিনায়ক হয়েছেন। পাকিস্তান ৪৩ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর ওয়াসিম টিম মিটিংয়ে সিনিয়রদের সাথে কঠোর ব্যবহার করেন। বলেন যে, সবাইকে নেটে আরও কঠোর হতে হবে এবং বেশি সময় দিতে হবে। এই কথায় সিনিয়ররা খেপে গিয়ে ওয়াসিমের বিরুদ্ধে গ্রুপিং করেন। এবং বলা হয় যে, ওয়াসিমের তার আগ পর্যন্ত প্রিয়তম বন্ধু ও সহঅধিনায়ক ওয়কার নাকি এই ‘বিদ্রোহ’ উষ্কে দিয়েছেন।
এর ধারাবাহিকতায় দ্রুত ওয়াসিমকে সরিয়ে সেলিম মালিককে অধিনায়ক করা হয়।
তারপরও সে সময় অবশ্য প্রকাশ্যে কখনো দু জন গন্ডগোল করেননি। ১৯৯৯ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে ভারতে থাকা অবস্থায় আসলে প্রথম বিস্ফোরনটা হয়। ওয়াসিম তখন অধিনায়ক।
দিল্লি টেস্ট হেরে যাওয়ার পর ওয়াসিম ও ওয়াকার ড্রেসিংরুমে সবার সামনে একে অপরকে দোষারোপ করেন এবং ‘আগলি’ কথার লড়াইয়ে জড়ান।
পুরো ব্যাপারটা জঘন্য একটা রূপ পেলো ২০০৩ বিশ্বকাপে এসে। এর আগ পর্যন্ত যা অনেকটাই আড়ালে ছিলো, তা প্রকাশ্যে চলে এলো। সে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন ওয়াকার ইউনুস। বলা হয়, ওয়াসিমকে দলে নেওয়াতেই তার আপত্তি ছিলো। তারপরও দলে আসার পর দু জনের কথাবার্তাই বন্ধ। পরষ্পরকে ইঙ্গিত করে বাজে কথা বলার নজিরও দেখা গেলো।
পাকিস্তান দল ওয়াকার ও ওয়াসিমের দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো। কোনো পক্ষ কারো সাথে কথা বলতো না। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন ইনজামাম-উল হক। তিনি সবার সাথে কথা বলতেন। অধিনায়ক ওয়াকার কোনো প্রয়োজন হলে ইনজামামের মাধ্যমে ওয়াসিমদের সাথে যোগাযোগ করতেন।
এই অবস্থা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ঠেলে দিলো। ফলে ওই ২০০৩ বিশ্বকাপ দু জনের জন্যই শেষ আর্ন্তজাতিক আউটিং হয়ে রইলো। এই ভয়াবহ বাজে সম্পর্কের কারণে দু জনেরই ক্যারিয়ার একই সাথে, একই দিনে শেষ হয়ে গেলো।
এও যেনো নিয়তির লেখা!
এখন কী অবস্থা? ওয়াসিম ধারাভাষ্যকার বা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। ওয়াকার পাকিস্তানের কোচ ছিলেন, এখন বোলিং কোচ। ফলে হুটহাট দেখা হয়ে যায়। হাত মেলান দু জনে। ছবির জন্য পোজও দেন। এ পর্যন্তই। কথা বিনিময়ে খুব একটা হয় না।
ক্রিকেট ইতিহাস অবশ্য এই দোস্ত বা দুশমনদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক মনে রাখবে না। ইতিহাসে লেখা থাকবে, পাকিস্তানে এসেছিলেন সর্বকালের সেরা দুই পেসার।
সেই সাফল্যটাই মনে রাখি আমরা।




Source:: https://www.facebook.com/100050251579629/posts/1020075153010861/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v




বাঁচাও বাংলা ভাষা


ফেরদৌস আহমেদ

বাংলা ভাষার পাখা শব্দ
হয়ে গেল ফ্যান
এক "শ"হল হান্ড্রেড আর
দশ হয়েছে টেন ।
মেয়ে বন্ধু গার্লফ্রেন্ড হল
দুঃখিত টা সরি
খালা, ফুফু আন্টি হল
ট্যাবলেট হল বড়ি
শিক্ষক থেকে টিচার হল
বিদ্যালয়টা স্কুল
নাপিত ভাইয়ের সাইনবোর্ডে
হেয়ার হলো চুল ।
ফেব্রুয়ারির একুশ হলো
ফাল্গুন মাসের আট
কাগজ শব্দ পেপার হল
রোড রাস্তাঘাট ।
বিজ্ঞাপনে সাবান শব্দ
হল বিউটি সোপ
যাতায়াত টা জার্নি হল
স্টপ হয়েছে চুপ।
বাজার থেকে মার্কেট হল
শপিং কেনাকাটা
ভ্রমণ থেকে ট্যুর হল
জগিং ভোরের হাঁটা।
করমর্দন হ্যান্ডশেক হল
মুরগি চিকেন ফ্রাই
গাড়িচালক ড্রাইভার হল
চেষ্টা হল ট্রাই।
ব্যবস্থাপত্র প্রেসক্রিপশন আর
সেবিকা হল নার্স।
সম্পূর্ণটা ফুল হলো আর
অংশ হল পার্স ।
সাহায্যকারী হেলপার হল
গিফট উপহার
নববর্ষ হয়ে গেল
হেপি নিউ ইয়ার।
ক দিন আগেও ছিল না এই
মিশ্র ব্যবহার
চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে
এটা কি কারবার ।
বাংলা ভাষার অনেক শব্দ
পরছে ঝরে ঝরে
মায়ের মুখের ভাষা যাচ্ছে
আগাছা তে ভরে ।
এই জন্য দায়ী কিন্তু
তুমি আমি ভাই
অকারণে বাংলা রেখে
ভিনদেশী গান গাই।
এইজন্য কি রক্ত দিয়ে
বাংলা এনেছি
সালাম বরকত প্রশ্ন করলে
উত্তর দেবে কি ?
বিদেশী ভাষা ব্যবহারে
হই এসো সাবধান
বাঁচিয়ে রাখি প্রাণের প্রিয়
বাংলা ভাষার প্রাণ।

আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট

দৌড় শুরু করার পরও ,

ইউসুফ (আঃ) জানতেন না দরজা খুলে যাবে।
মুসা (আঃ) জানতেন না
সাগর চিরে পথ তৈরি হবে।
কিন্তু নিশ্চিত জানতেন
আল্লাহ বাঁচাবেন ,
এবং , তাই হয়েছিল ! 
 
" আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট ,
এবং তিনিই সর্বোত্তম কর্মকর্তা। "
(আলে-ইমরান ১৭৩)

নাই নাই

ফেরদৌস আহমেদ
 
নৌকাতে পাল নাই
গরুটানা হাল নাই
খড়ে ছাউয়া চাল নাই,
নাই আজ হারিকেন ও নাই কেরোসিন
সবকিছু যেন আজ হাওয়ায় বিলীন।
মাটে-ঘাটে খেলা নাই
বৈশাখী মেলা নাই
ঠেলা গাড়ি ঠেলা নাই
নেই সেই চির চেনা জারি সারি গান
এই কথা মনে হলে কেঁদে ওঠে প্রাণ ।
কাঠের ঐ ঢেঁকি নাই
চিঠি লেখা-লেখি নাই
আধুলি ও সিকি নাই
নেই সেই রুমাল আর নেই কারুকাজ
হারানোর শোকে তাই চোখে জল আজ।
রাতে বর যাওয়া নেই
পাটি পেতে খাওয়া নেই
বিয়ে গীত গাওয়া নাই
নেই মাটি কলস আর নেই তার জল
সে ব্যথায় চোখ দুটি করে টলমল।
শিয়ালের ডাক নাই
শকুনের ঝাঁক নাই
হুক্কা তামাক নাই
নাই সেই গরুগাড়ি লাঙ্গল আর মই
মন বলে আহা সব কই গেল কই!
মাটির ঐ হাড়ি নাই
বেয়ারিংয়ের গাড়ি নাই
নন্দিনি শাড়ি নাই
নাই সেই স্মৃতি মাখা ইকোনো কলম
ভাবতেই হায় হায় যায় যায় দম ।
কূপের ঐ পানি নাই
কুলুদের ঘানি নাই
সেই মেজবানি নাই
পাটের ঐ শিকাটা ও নাই আজকাল
"নাই "ঝড়ে জীবন আজ বড় নাজেহাল।
কবাডি হাডুডু নাই
কুতকুত ও লুডু নাই
ভিউকার্ডে ফটো নাই
নাই সেই জলে ভাসা কসকো সাবান
মনে হলে বুকে বাজে বিরহের গান ।
লোকে লোকে মিল নাই
বিল যেন বিল নাই
পাটা আর শীল নাই
চুড়ি আর ফিতা দিয়ে নাই সেই সাজ
নাই নাই করে শেষ আগের সমাজ।

তবুও মা যেন কেমনে সব বুঝে

 স্কুল থেকে বাসায় এসে দেখি মামা এসেছে। মামা আসলে আমাদের বাসায় একটা উৎসবের মতো হয়।মামা প্রতিবার বিভিন্ন বিখ্যাত খাবার নিয়ে আসে। গতবার এনেছিল কুমিল্লার রসমালাই। আমার বাবা একটা জুট মিলে চাকুরী করে।আমাদের খুব অভাবের সংসার।

তারউপর আমার পড়ালেখার খরচ।
মেহমান ছাড়া আমাদের বাসায় পোলাও রান্না হয় না।পোলাও আমার প্রিয় খাবার। অপেক্ষায় থাকি কবে মেহমান আসবে।মামা কে দেখে আমি প্রচন্ড খুশি! ভাবছি আজ পোলাও রান্না হবে!
বাবা বাজার থেকে গরুর মাংস এনেছে।গরুর মাংস আর পোলাও।আমি আবার নরম মাংস ছাড়া খেতে পারি না।মা জানে এটা।মা আমার খাবারের দূর্বলতা জানে।মায়েরা সব বুঝে! আমার জন্য আলাদা করে বেছে মাংস রেখে দেয়।যে-দিন পোলাও রান্না হয়।মা একটু বেশি করে রান্না করে।
মাংসতেও আলু ঝোল দিয়ে রান্না করে, যেন পরের দিন সকালে খেতে পারি।সকালে আগেরদিনের মাংসের ঝোল এক/দুটোকরা আলু দিয়ে
পোলাও সেই স্বাদ! আমরা যে ভাবে বেড়ে উঠেছি,সেখানে আমার এটা পছন্দ এসব বলার সুযোগ নেই।তবুও মা যেন কেমনে সব বুঝে!
আমাদের রান্না ঘরটা একটু দূরে, রান্না ঘরের পাশে বাথরুম। বাথরুম বলতে একটা ঘর নিচে পাকা করা, একটা চাপ কল। কলেই গোসল, খাবার পানি সব। মা রান্না করছে।আমি আজ খেলতে বের হয়নি। একটু পর পর রান্না ঘরে যাই।দেখি মায়ের রান্না কখন শেষ হবে।মামা আজ বগুড়ার দই এনেছে।
মায়ের রান্না শেষ, সবাইকে খেতে দিবে আমরা সবাই খেতে বসেছি।
মা গেল চাপ কল থেকে পানি আনতে।আমাদের চাপ কলটা একটু শক্ত।
চাপ দিতে গিয়ে মা,কলের হাতেল ছিটকে মারাত্বক ব্যাথা পেলেন, পরে গেলেন পাকার উপর,অজ্ঞান হয়ে গেলেন, মাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল।
মায়ের জ্ঞান ফিরলো ঘন্টাখানিক পর।মাথায় আঘাত পেয়েছেন।
ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। দূরে দাড়িয়ে কাঁদছি। মা আমাকে কাছে ডাকলেন
ইশারায়। আমি মায়ের বেডের পাশে বসলাম।মা মাথায় হাত দিয়ে বললো খেয়েছিস? আমি কাঁদছি।কাঁদছিস কেন বোকা আমার কিছু হয়নি।
বাসায় যা আলমারির মাঝের তাকে তোর জন্য বাটিতে মাংস রেখেছি!!!

source: https://www.facebook.com/100090252501530/posts/422736914078055/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

কদম ছেড়া বন্ধ করুন

দয়া করে পাখিদের খাবার নষ্ট করবেন না।

এই সময় পাখিদের মন্দা কাল( খাবারের সংকট) চলে।

গাছের নিচে বা রাস্তায় পড়ে না থাকলে বা খুব দরকার ঔষুধী কাজ না হলে কদম ফুল সহজে ছিঁড়বেন না, কারণ কদম ফুল তিনবার ফুটে তারপর সে খাবার হয় পাখিদের। পাখিদের বর্জ্য থেকেই কেবল প্রাকৃতিক কদম চারা জন্মায়। প্রতি কদমফুলে প্রায় ৮ হাজার বীজ থাকে। যা পাকলে পাখি, বাদুড় ও কাঠবিড়ালির খুব প্রিয় খাবার হয়৷
ভাদ্রমাসে যখন গাছে গাছে ফল থাকে না তখন পাখিদের প্রাণীদের খাবারের আকাল চলে। কদম তখন প্রধান খাবার হয়ে ওঠে পাখি, বাদুড় ও কাঠবিড়ালির জন্য। ওরাই বীজ ছড়ানোর বাহন। ফলে ফুল যদি আগেই ছিঁড়ে ফেলা হয় তাহলে পাখিরা খাদ্য বঞ্চিত হবে এবং একসময় আমরা কদমের শোভা থেকে বঞ্চিত হবো।

কদম ফুল ছিঁড়া থেকে বিরত থাকি
ধন্যবাদ

https://www.facebook.com/100066310669489/posts/794552239431791/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

অভিমান

চার অক্ষরের এই শব্দটা যার উপর ভর করে,তাকে আর কোনোভাবেই ফেরানো যায় না। কিছু অভিমান হয়তো ভাঙে,কিন্তু যখন খুব কাছের মানুষের কাছ থেকে খুব বড় আঘাত পান,সেই অভিমান সহজে ভাঙে না। যাকে উদ্দেশ্য করে বলছি,তার বেলাতেও আজো দুই দশক পেরিয়ে গেলেও ভাঙে নি। আফসানা মিমিকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,আপনাদের পরবর্তী সময়ে কোন অভিনেত্রীকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা করেন,জবাবে মিমি বলেছিলেন যাকে নিয়ে বেশি প্রত্যাশা করি সে অভিনয় একেবারেই কম করেন। অভিনয় কম ই করতেন,বাবার নাটকের বাইরে কখনো অভিনয় করেন নি,তাও বেছে বেছে। সব মিলিয়ে বোধহয় গোটা দশেক কাজ ও হবে না,অথচ এই কাজগুলো দিয়েই তিনি চিরসবুজ হয়ে আছেন দর্শকদের মনে,হয়ে আছেন আক্ষেপ । কেন তাকে আর অভিনয়ে পাওয়া গেল না,এই নিয়ে রয়েছে দীর্ঘ আফসোস,তিনি সবার প্রিয় সেই মিষ্টি হাসির মিষ্টি কন্যা কঙ্কাবতী শীলা আহমেদ।

আজ রবিবারের কঙ্কা,যার মাধ্যমেই শুরু হয় এই জনপ্রিয় ধারাবাহিক। এই কঙ্কা চরিত্রটির মধ্য দিয়েই একে একে অন্যান্য চরিত্রগুলোর পরিচিতি ঘটে। পুরো ধারাবাহিকে কঙ্কার প্রানবন্ত সারল্য উপস্থিতি যে কাউকে মুগ্ধ হতে বাধ্য,আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি কঙ্কার প্রেমে পড়েন নি এমন তরুণ বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ রবিবারের কঙ্কা হয়েই বড়বেলায় এসে পর্দায় হাজির হন শীলা আহমেদ,আর এসেই বাজিমাৎ। শুধুমাত্র এই কাজটি দিয়েই সে দর্শকদের কাছে আজীবন মনে থাকবেন।
ছোটবেলা থেকেই শীলা আহমেদের জনপ্রিয়তা। বাবা বিখ্যাত সাহিত্যিক ও নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ। বহুব্রীহি ধারাবাহিকে গায়ে হলুদের এক অনুষ্ঠানে স্বল্প মিনিটের উপস্থিতি দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক,অয়োময়তে ছিল বাবার হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নকন্যা। তবে পরিচিতি বাড়তে থাকে প্রিয় পদরেখা,অচিন বৃক্ষ নাটকের প্রচারের পর থেকে। এরপর তো ইতিহাস সৃষ্টিকারী কোথাও কেউ নেইতে 'লীনা' চরিত্রে ছোট্ট মেয়ের সারল্য অভিনয়,এত এত দাপুটে অভিনয়শিল্পী থাকার পরেও নজর কেড়ে নেন।
'আগুণের পরশমণি',তার জন্য নিয়ে এলো বিশেষ কিছু। বাবার পরিচালনায় প্রথম ছবি। ঢাকা শহরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আটকে পড়া এক পরিবারের ছোট কন্যা অপলা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। যারা এই ছবিটি দেখেছেন তাদের কাছে আলাদা করে কিছুই বলবার নেই। আমার দেখা অন্যতম সেরা শিশুশিল্পী তিনি,অপলা চরিত্রটি আমার মনে সব সময় গেঁথে থাকবে,আমার বিশ্বাস সবার ই থাকবে। চরিত্রটা যেমন অসাধারণ,তেমনি অসাধারণ অভিনয়ে জিতে নেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। একটিমাত্র সিনেমা,আর তাতেই জাতীয় পুরস্কার পেয়ে আজো ইতিহাসে উজ্জ্বল।
উইজা বোর্ড,হিমু, নক্ষত্রের রাতের পলিনের পর তো আজ রবিবার করলেন। কাছাকাছি সময়ে নিমফুল ও করলেন,সঙ্গে ক্লোজআপের বিজ্ঞাপন। শীলা আহমেদ তখন হয়ে উঠছে নতুন প্রজন্মের উদীয়মান অভিনেত্রী,তাকে নিয়ে প্রত্যাশা প্রচুর।সর্বশেষ খোয়াবনগরে খোয়াব কন্যার অভিনয়।
এরপর অভিনেত্রী হিসেবে বিদায় ঘটলো শীলা আহমেদ। এমনিতেই অভিনয় কম করতেন,বাবার এক কঠিন সিদ্ধান্তে নিজেকে মেনে নিতে না পেরে অভিমানে অভিনয় টাই ছেড়ে দিয়ে আড়ালে চলে গেলেন। আর অভিনয়ে আসেন নি। বাবার প্রতি তার অনেক অভিমান,এমনকি নিজের বিয়ের সংবাদ ও বাবাকে জানান নি। তবে বাবা উপস্থিত হয়েছিলেন তার প্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদারকে নিয়ে। শীলার এই গুটিয়ে যাওয়া নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের খুব দুঃখবোধ ছিল, তাই হয়তো বলেছিলেন শীলা জেনে গেল পৃথিবীতে খারাপ বাবাও আছে।

©হৃদয় সাহা
source: https://www.facebook.com/100035350046576/posts/1137344567453867/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

ক্রিকেটে স্লেজিং খুবই স্বাভাবিক ঘটনা

তানজিম সাকিব-কোহলির স্লেজিং/অঙ্গভঙ্গি নিয়ে দুটি কথা।

স্লেজিং ক্রিকেটে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তা যত “ভদ্রলোকের” খেলাই হোক না কেন। ভদ্রলোকেরা ভদ্রভাবে গালাগালি করে, অথবা এমন সব কথা বলে যাতে বিপক্ষ দলের প্লেয়ারের ফোকাস নষ্ট হয়। এইটা খেলারই অংশ।
স্লেজিংয়ের সম্রাট বলা হয়ে থাকে স্টিভ ওয়াহকে, দুনিয়া ওরচেয়ে ভাল ক্যাপ্টেন খুব বেশি দেখেনি। সাধারণ একটি দলকে কিংবদন্তিতে ঠাসা একটা অপরাজেয় দলে পাল্টে ফেলেছিল।
ওরই সাগরেদ, স্পিন জাদুকর শেন ওয়ার্ন ছিল আরেক স্লেজিং মাস্টার। মাম্মি ড্যাডি এক করে গালি দিত। স্লেজিংয়ে ওস্তাদ ছিল গ্লেন ম্যাকগ্রা। কোথায় যেন পড়েছিলাম এক ম্যাচে রাম নরেশ সারোয়ানকে বলেছিল, “লারার নু&$ চুষতে কেমন লাগে?”
জবাবে সারোয়ান বলে, “তোর বৌকে জিজ্ঞেস করে দেখ। ও ভাল বলতে পারবে।”
এ নিয়ে সিরিয়াস মারামারি বেঁধেছিল। ম্যাচটা অস্ট্রেলিয়া হারে।
সৌরভ গাঙ্গুলির এফেয়ারের গুজব ছিল নায়িকা নাগমার সাথে। মাঠে এ নিয়ে যা তা স্লেজিং করতো অস্ট্রেলিয়া। ইন্ডিয়াও পাল্টা জবাব দিত। হরভজন সিং একবার সাইমন্ডসকে “তেরি মাকি….” (তোর মায়েরে….) বলে, কিন্তু জাতিতে এবোরজিন (আদিবাসী) সাইমন্ডস ভেবেছে ওকে “মাঙ্কি” (বান্দর) গালি দিয়েছে। এই ঘটনা বহুদূর এগিয়েছিল।
ইয়ুভরাজ সিংকে ফ্লিন্টফ বলেছিল তোর সাথে “দুষ্টু কাজ" (বুঝে নেন) করব।
ইয়ুভরাজ ওকে নিজের ব্যাট দেখিয়ে দিয়ে বলে “তোর পিছন দিয়ে এই ব্যাট দিয়ে দুষ্ট কাজ করবো।”
একজন আরেকজনকে “দুষ্ট কাজ" গালি দিতে দিতে বেচারা ব্রডকে ইউভি ৬ বলে ৬ ছক্কা মেরে দিল।

মুরালিধরন স্লেজিং করতো আরও রাজসিকভাবে। বিপক্ষ দলের ড্রেসিং রুমে গিয়ে একেকটা ব্যাটসম্যানের দিকে নিজের ভয়ংকর গোলগোল চোখ পাকিয়ে বলতো, “আজকে তুই আমার!”
দেখা যেত বেশিরভাগ সময়েই মুরালি সেই ব্যাটসম্যানকেই আউট করতো।

হ্যা, টেন্ডুলকার ছিল ব্যতিক্রম। সাকলায়েন মুশতাক ক্যারিয়ারের শুরুতে শচীনকে গালাগালি করছিল। শচীন তখন ওর সামনে এসে বলে, “আমিতো তোমাকে গালি দিচ্ছি না, তুমি তাহলে কেন দিচ্ছ?“
সাকলায়েন সেদিন এত লজ্জিত হয়েছিল যে আর কখনই শচীনকে গালি দেয়নি।
শচীনের ভদ্র হবার একটাই কারন ছিল, ওর বাপ। যিনি ওর মাথার ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যে “তোমাকে কোটি কোটি মানুষ অনুসরণ করে, ওদের কারোর জন্যই ব্যাড এক্সাম্পল তৈরী করোনা।”
এই কারণেই সে কখনও বিড়ি সিগারেট, মদ জুয়ার মডেল হয়নি। কিন্তু বাকিরা কেউই টেন্ডুলকার না।

স্লেজিং কাকে বলে দেখতে চাইলে পাক-আফগান ম্যাচ দেখেন। মনে হবে কুস্তি দেখছি। বিশেষ করে নাসিম শাহ একেবারেই পার্সোনালি নেয়।
স্লেজিং করতো না হাশিম আমলা, করেনা মোহাম্মদ রিজওয়ান, বাবর আজম, আদিল রশিদ, মঈন আলীরা। বিষয়টা ধর্মীয়। তবে আগ্রাসন ঠিকই দেখান। সেই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থাকতেই হবে। নাহলে প্রফেশনাল স্পোর্টস আপনার না।
ভিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা স্লেজিংয়ের কারণেই পরিচিত। গালাগালি ছাড়া একটা বাক্য শেষ করতে পারেনা। নিজের সতীর্থদেরও গালি দিয়ে কথা বলে (চিটাগংয়ের ভাষায় “আবেগ”) প্রতিপক্ষকেতো খেয়েই ফেলে। কোহলি আমাদের রুবেলকে মা তুলে একটা গালি দিয়েছিল ২০১১এর বিশ্বকাপে। এখনও ইউটিউবে থাকার কথা। ধোনি মুস্তাফিজকে গুতা দিয়েছে, শাহীন আমাদের ব্যাটসম্যানের দিকে বল ছুঁড়ে মেরেছে ইত্যাদি বহু ঘটনা ভাইরাল হয়েছে। এইসবই খেলার অংশ। খেলা শেষে মাঠের বাইরে এরাই বন্ধু হয়ে যায়।
এখন কথা উঠছে তানজিম সাকিব কোহলিকে আউট করে ওই অঙ্গভঙ্গি করেছে।
প্রথমত, ভিরাট কোহলি কোন ফজলু বজলু না যে দিনে রাতে ইচ্ছা করলেই ওর উইকেট পাওয়া যায়। একটা বলার হয়তো গোটা ক্যারিয়ারে একবারই ওর উইকেট পায়। কাজেই এটি যেকোন বোলারের জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। ওতো আনন্দিত হবেই।
কোহলি সামনে এগিয়ে এসে ওকে বাউন্ডারি ছাড়া করতে এসেছিল, সাকিব সেই আগ্রাসী কোহলিকে বোল্ড আউট করেছে। এইটা আরেকটা পয়েন্ট। তোমার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তিপ্রয়োগে আগানো প্রতিপক্ষকে একদম মোক্ষমভাবে বধ করা হয়েছে। এটিও বিশাল কিছু। বাউন্ডারি লাইনে অলৌকিক ক্যাচে আউট করার সাথে এর যোজন যোজন পার্থক্য।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ও কি অশ্লীল কিছু করেছে? বলেছে? ফ্লিন্টফ যেমন ইয়ুভিকে বলেছিল ”দুষ্টু কাজ করি" বা এই জাতীয় কিছু? লিপ রিডাররা কি বলবেন? কোহলি নিজে কোন বিচার সভা বসিয়েছে? আম্পায়ার? ম্যাচ রেফারি? তাহলে বাঙ্গু পাবলিকের এত জ্বলে উঠার কারন কি? কোথায় গর্ব করবে যে “আমাদের দেশের ছেলে ইতিহাসের সর্বকালের সর্বসেরা ব্যাটারদের একজনের চোখে চোখ রেখে মোক্ষম জবাব দিয়েছে, সাবাশ ব্যাটা" তা না, আসছে চুশীলতা শেখাতে! “ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা…” দালালি একেবারে এপিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে!
ড মোহাম্মদ আমীন নামের এক ছাগলতো মিথ্যা বানোয়াট গল্প লিখে ভাইরাল হয়ে গেছে। ওর নাকি বিদেশী প্রফেসর তানজিম সাকিবের আচরণ দেখে ওকে শুয়োরের সাথে তুলনা করেছে। মূর্খ দালালটা আমাদের “বিদেশী প্রফেসর” চেনাতে এসেছে।
প্রথমত, এইটা চরম রেসিস্ট আচরণ। এই এক মন্তব্যেই ঐ প্রেফসরের চাকরি চলে যাবে। কেউ ইউনিভার্সিটি অফ অটোয়াতে খোঁজ নেন এরিক ম্যাথিউ নামের প্রফেসরের বিরুদ্ধে কমপ্লেন দেন যে সে ওর সহকর্মীকে এই কথা বলেছে, থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে।
আর দ্বিতীয়ত, উত্তর আমেরিকায় যেকোন স্পোর্টসে, ফুটবল হোক, বাস্কেটবল, বেসবল বা আইস হকি - কোথাওই সুশীলতা পাবেন না। “দুষ্ট কাজ" শব্দটা এখানে মুড়ি মুড়কির মতন ব্যবহার হয়।
তাই গাঞ্জা পাতার সাথে হেরোইনের ডোজ না নিলে কোন শিক্ষিত “প্রফেসর" এমন মন্তব্য করবে না। ওটা ঐ দালাল লেখকের নিজের মন্তব্য যা সেই প্রফেসরের নামে চালানোর চেষ্টা করেছে।
আমি খুবই অবাক হই এইটা দেখে যে আমাদের দেশ এত বছর ধরে ক্রিকেট খেললেও আমাদের দেশের একটা বিরাট অংশ পাকিস্তান ও ভারতের পদলেহন করে। কোহলিকে সাপোর্ট করতে, যেখানে ওর বিরুদ্ধে কোন অন্যায়ই হয়নি, যা খুবই স্বাভাবিক ক্রিকেট আচরণ, নিজের দেশের ছেলের বিরুদ্ধে চলে যাওয়া! কিভাবে সম্ভব?
এখন কিছু ছাগু আসবে ট্যাগ দিতে “পাকিস্তানী দালাল। রাজাকার ইত্যাদি।”
এই সমস্ত মূর্খদের ব্যাপারে বহু আগে থেকেই জিরো টলারেন্স নীতিতে চলি। হাত থাকতে মুখ ব্যবহার করিনা। এখানে আমার পয়েন্টই এইটা, যতখন পর্যন্ত অন্যায় হচ্ছেনা, ততক্ষন “বাংলাদেশ সবার আগে। সামনে কোহলি হোক, বা শাহীন শাহ, ম্যাটার করেনা।”
আমরা প্রবাসীরা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ইত্যাদি দেশে থেকে, ওদের নুন খেয়েও নিজের দেশের জন্য চিল্লায়ে গলা ফাটাই, আর এইসব আগাছাগুলি নিজ দেশে থেকে কিভাবে আরেকদেশের এতটা চাটাচাটি করতে পারে? ভিরাটের দিকে সামান্য চোখ রাঙ্গানি দিয়েছে, এতেই জ্বলে পুড়ে মরছে, আর হারমানপ্রীত যে আমাদের জ্যোতিদের “আম্পায়ারদের নিয়ে এসে উদযাপন করো, ওরাই তোমাদের জিতিয়েছে” বলে নোংরামি করেছিল, যেজন্য শাস্তিও পেয়েছিল এবং নিজের দেশেই সমালোচিত হয়েছিল, তখন এই প্রতিবাদী পোস্টগুলি কোথায় ছিল? তানজিম সাকিবের বিরুদ্ধে না ভিরাট, না রোহিত, না আম্পায়ার, না ম্যাচ রেফারি, না আইসিসি কিছু বলেছে, এদের বুকে কেন এত জ্বালা হে পাঞ্জাবিওয়ালা?
৭১এ রাজাকাররা যেমন পাকিস্তানী প্রভুদের খুশি করতে নিজের মা বোনদের তুলে নিয়ে ওদের কোলে তুলে দিয়েছিল, এরাও ইন্ডিয়াকে খুশি করতে একই কাজ করতে পিছপা হবে না। বলে দিচ্ছি, লিখে রাখতে পারেন।
বাংলাদেশের আফসোস, এখানে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইন্ডিয়া, পাকিস্তানের সমর্থকের ছড়াছড়ি, শুধু বাংলাদেশের সমর্থকই মাইনোরিটি।



Post from https://www.facebook.com/manzur.m.choudhury

মুহাম্মদ ইউনূস

 আমেরিকান এক সাংবাদিক মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় প্রশ্ন করেছিলেন, বিশ্বব্যাংক নিয়ে আপনার সর্বক্ষণ অভিযোগ। সমালোচনার বদলে বলুন, আপনি নিজে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হলে কী কী পদক্ষেপ নিতেন?

জবাবে ইউনূস সাহেব বলেছিলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হলে কী করবো, তা আমি কখনও ভেবে দেখিনি। তবে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হতে পারলে বোধহয় আমার প্রথম কাজ হবে এর প্রধান কার্যালায় ঢাকায় স্থানান্তরিত করা।
সাংবাদিক পাল্টা প্রশ্ন করলেন, এরকম একটা অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নেবার কারণটা জানতে কী পারি?
মুহাম্মদ ইউনূস উত্তর দিলেন, আসলে প্রধান কার্যালয় ঢাকা শহরে স্থানান্তরিত করলে বিশ্বব্যাংকের পাঁচ হাজার কর্মচারী সেখানে বদলী হবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবেন। সন্তানদের ঠিকমতো মানুষ করে তোলার জন্য আনন্দদায়ক এমনকি
সামাজিক জীবন যাপনের জন্য ঢাকা শহরকে তারা কখনো উপযুক্ত মনে করেন না। অতএব, অনেকেই স্বেচ্ছা অবসর নেবেন কিংবা চাকরি বদল করবেন। সেক্ষেত্রে আমার দু’টি সুবিধা। এক, যারা দারিদ্র দূরীকরণের জন্য একান্তভাবে উৎসর্গীকৃত নন তাঁদের বাদ দেয়া যাবে। দুই, সেই খালি পদগুলিতে সমস্যা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ও অঙ্গীকারবদ্ধ এইরকম কর্মী নিযুক্ত করা যাবে।
...
বিশ্বে ২৫টি দেশে তাঁর লেখা বই অনুবাদিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি বই নিউইয়র্ক টাইমসে বেস্টসেলার লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে। কানাডার সপ্তম গ্রেডে জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে তাঁর জীবনী অন্তর্ভুক্ত করেছে৷ কানাডার শিশু-কিশোরদের তাঁর জীবনী পড়ানো হয়। ১২ সালে গ্লাসগো ক্যালেডনিয়ান ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর বানানো হয় তাকে। যেখানে কিনা ইউনিভার্সিটির সংবিধান ছিল ব্রিটিশ নাগরিক ছাড়া ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর বানানো যাবে না। সেখানে সংবিধান পরিবর্তন করে তাকে ভাইস চ্যান্সেলরই বানানো হয়েছে।
...
১৯৭৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ড. ইউনূস জাতীয় ও আন্তর্জাতিকসহ প্রায় ১৫০টি পুরস্কার/সম্মাননা পেয়েছেন। তাও আবার যেনতেন পুরস্কার নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক তিনটি পুরস্কার হলো, নোবেল, অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টশিয়াল অ্যাওয়ার্ড এবং কংগ্রেশনাল অ্যাওয়ার্ড। ইতিহাসে এই তিনটা পুস্কারই পেয়েছেন মাত্র ১২ জন। এরমধ্যে প্রফেসর ইউনূস একজন। বর্তমান বিশ্বের ৩৩টি দেশে ১০৪টি বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজে তাঁর নামে ইউনূস সোশ্যাল বিযনেস সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে গবেষণা হচ্ছে তাঁর কাজ, চিন্তাদর্শন এবং তাঁর সোশ্যাল বিযিনেজ তত্ত্ব নিয়ে। সামাজিক ব্যবসার ওপর একাডেমিক কোর্সও চালু হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সর্বশেষ অলিম্পিকে মূল থিম ছিল তাঁর সোশ্যাল বিযিনেজ থিউরির উপর ভিত্তি।
...
ছোটবেলা থেকেই বইয়ের পোকা ছিলেন ড. ইউনূস। তাঁর বড় ভাইও ভীষণ বইপ্রেমি ছিলেন। তাঁরা একরুমে থেকে একসাথে পড়াশোনা করতেন। যে রুমে তাঁরা পড়াশোনা করতেন তার নিচতলায় তাঁর বাবার স্বর্ণের ব্যবসার অফিস ছিল। তাঁরা পড়াশোনা করে কিনা, বাবা তা চেক করতে মাঝেমধ্যে উপরে উঠে আসলে, জুতোর শব্দ শুনে দুই ভাই তড়িঘড়ি করে অন্যসব কাজ বা নন-অ্যাকাডেমিক বই পড়া বাদ দিয়ে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বসে যেতেন। বাবা যখন রুমে ঢুকে দেখতেন তাঁরা পড়ছে, তখন খুশি হয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে চলে যেত। সেসময় নিয়মিত পত্রিকা ও গল্পের বই পড়তে বাবার হাত থেকে বাঁচার জন্য বাসার ঠিকানা ব্যবহার না করে পাশের বই দোকানের ঠিকানা দিতেন পত্রিকার হকারদের। এই নিয়ে তাঁর আত্মজীবনীতে এই সময়টার মজার স্মৃতি তিনি এভাবে তুলে ধরেন:
‘বড়দা ও আমি আমি হাতের কাছে বই বা পত্রিকা যা পেতাম পড়ে ফেলতাম। আমি রহস্য রোমাঞ্চ ও গোয়েন্দা কাহিনীর ভক্ত ছিলাম। বারো বছর বয়সে আমি নিজেই গোটা এক রহস্যকাহিনী লিখে ফেলেছিলাম। অবিরত পড়ার খোরাক যোগাড় করা আর আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছিল না। প্রয়োজন মেটাতে নিজেদেরই উপায় উদ্ভাবন করতে হয়েছিলো-বই কেনা, ধার করা, এমনকি চুরি পর্যন্ত। আমাদের প্রিয় শিশুপাঠ্য পত্রিকা শুকতারা কলকাতা থেকে প্রকাশিত হত। তাতে নিয়মিত একটি প্রতিযোগিতা থাকত, জিতলে বিনামূল্যে পত্রিকার গ্রাহক হওয়া যেত। পত্রিকায় বিজয়ী প্রতিযোগীদের নাম ছাপা হত। তাদের মধ্যে একজনের নাম বেছে আমি সম্পাদককে চিঠি লিখেছিলাম:
মাননীয় সম্পাদক,
আমি অমুক, একজন বিজয়ী প্রতিযোগী। আমাদের ঠিকানা বদল হয়েছে। এখন থেকে আমার বিনামূল্যে প্রাপ্য সংখ্যা ডাকযোগে বক্সিরহাটে পাঠালে বাধিত হব।
বাড়ির নম্বর হল…
আমাদের সঠিক ঠিকানা না দিয়ে পাশের দোকানের ঠিকানা জানালাম যাতে করে পত্রিকা আব্বার হাতে না পড়ে। প্রতি মাসে আমরা সেই বিনামূল্যের সংখ্যার অপেক্ষায় বসে থাকতাম। এবং এই পরিকল্পনা নিখুঁতভাবে স্বপ্নের মতো কাজ করেছিল।’
...
গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় হচ্ছে তাঁর নতুন ধারণা ‘থ্রি জিরো ওয়ার্ল্ড’। যেখানে তিনি ধারণা দিয়েছেন আগামী বিশ্ব সকলের নিরাপদ বসবাসের উপযোগী করে তুলতে দারিদ্র হতে হবে শূন্যের কোটায়, বেকারত্ব থাকতে হবে শূন্যের কোটায়, আর গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণও হতে হবে শূন্য। আর এই তিন শূন্য কিভাবে নিশ্চিত করা যায় তার ধারণা তিনি শেয়ার করেছেন তাঁর অ্যা ওয়ার্ল্ড অব থ্রি জিরোস বইতে। ইতোমধ্যে তাঁর নতুন এই চিন্তাদর্শন কাজে লাগাতে শুরু করেছে বিশ্বের অনেক দেশ। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অর্গানাইজেশন তাঁর চিন্তার আদলে সাজাচ্ছেন তাদের সামাজিক বিযিনেজ কার্যক্রম। তাঁর এই চিন্তাদর্শন যত দ্রুতগতিতে বিস্তার করছে বিশ্বব্যাপি মানুষের মধ্যে তাতে ধারণা করা যাচ্ছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তিনি আবারও নতুন করে অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়ার জন্য আলোচনায় থাকবেন।
...
গত কয়েক দশকে প্রফেসর ইউনূস পৃথিবীর যে দেশেই গিয়েছেন সেখানেই সমাদৃত হয়েছেন, সমৃদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের নাম। পৃথিবীর যে প্রান্তে গেছেন সেখানেই মানুষ তাকে সর্বোচ্চ সম্মান জানিয়েছেন। এ মুহূর্তে জীবিত লিডিং ইন্টেলেকচুয়ালদের তালিকা করলে টপে থাকবে তাঁর নাম। সেরা পাঁচ ইন্টেলেকচুয়ালের মধ্যে একজন হবেন তিনি। ইউনূস এদেশের ছেলে, এ পরিচয় আমাদের জন্য পরম গর্ব এবং আনন্দের। বাংলাদেশি পোস্টারবয় হিসেবে বিশ্বে এদেশের একমাত্র গ্লোবাল আইকন কেউ হয়ে থাকলে তিনি হলে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। একশো বছরেও এমন একজন ইউনূস তৈরি করা সম্ভব নয়।

Monday, June 24, 2024

সময়ের ব্যবধান

 আমার এবং বাবার যুগের তফাৎ হলো এই

বাবার যুগের নৈতিকতা আমার যুগে নেই।
বাবার ঘরে ফকির এলে বসতে দিত পিড়ি
ফ*কির কাঁদে আমার ঘরের চায় না কেহ ফিরি।
বাপ চাচাদের বাড়ি ছিল এক উঠোনে বাঁধা
দুই গাঁয়ে দুই ঘর বেঁধেছি আমি এবং দাদা।
বাবার চোখে আসতো পানি কাঁদলে কুকুর ছানা
মানুষ কাঁদে তাও দেখি না আমি এমন কানা।
পথে বাবা গাছ লাগাতো পাইতে পথিক ছায়া
সেই পথিক আর পথ প্রতি নেই আমার কোন মায়া।
আমার শিশুকাল কেটেছে যত্নে মায়ের কোলে
আমার মেয়ে কান্দে তাহার মা চলে যায় স্কুলে।
বাবার দু চোখ ভরতো জলে কাঁদলে আমার মাতা
সঙ্গী মরে তাও ভিজে না আমার আঁখির পাতা।
বাবার কোলে মাথা রেখে মরল আমার দাদা
মাতা পিতার নেই না খবর আমি এমন গা*ধা।
বাপ চাচারা খাইলো মিলে যে নলকূপের পানি
সেটা নিয়ে আমরা দু ভাই করছি হানাহানি।
আগের মানুষ মূর্খ হলেও মানুষ ছিল ভালো
লেখা পড়া থাকলে ও আমার মনটা অনেক কালো।
আগের মানুষ গরিব হলে ও ভালো ছিল স্বভাব
লোকের এখন ‌টাকা আছে নৈতিকতার অভাব।
©সময়ের ব্যবধান - ফেরদৌস আহমেদ।

ভোক্তার কোনো পছন্দ নেই!

 কয়েকজন সিনিয়র কলিগ প্রমোশন পেলেন। আমরা পেলাম তাদের থেকে ভূরিভোজনের নেমন্তন্ন।

যথারীতি নির্দিষ্ট জায়গায় খেতে গেলাম। টেবিলে চারজন। ওয়েটার প্রথমে পানি এনে দিলো, তারপর এলো কোমল পানীয়র বোতল। সাদা, কালো, হলুদ।
প্রথমে সবার সামনে কোকের বোতল পরিবেশন করা হলো। আমার পাশের জন হেরেরেরে করে উঠে কালোটা চেঞ্জ করে সন্তুষ্ট চিত্তে একটা সাদা স্প্রাইট নিলো। আরেকজন নিলো হলুদ ফান্টা। আমাকে নির্লিপ্ত থাকতে দেখে কিছুটা কটাক্ষ করে পাশেরজন বললো- "তুমি ওদেরটা খাবা!"
আমি মিষ্টি করে হেসে বললাম তোমার বোতলটা হাতে নাও এবং কোম্পানির নামটা পড়ে দেখ।
টেবিলের সবাই আগ্রহভরে নিজ নিজ বোতলের লেবেলে কোম্পানির নাম খুঁজতে লেগে গেল এবং সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যেই সবার চেহারায় বিষ্ময়ের আভাস দেখলাম। এরা প্রত্যেকেই উচ্চ শিক্ষিত।
একটু কেশে বললাম- "একটু দেখে শুনে খাবেন। ভুত নানারূপ ধরতে পারে।"
এবার আসেন আসল আলাপে। কোকাকোলার মার্কেটিং পলিসি ভীষণ এগ্রেসিভ। মানে এরা মার্কেটিং-এ দুহাতে খরচ করে। নতুন-পুরাতন রেস্টুরেন্টের ডেকোরেশনে তারা হাত খুলে খরচ করে। বিনিময়ে রেস্টুরেন্টে শুধু তাদের প্রোডাক্টের মনোপলি বিজনেস চায়, অন্য কোনো প্রোডাক্ট প্রবেশ নিষেধ।
আপনি সচেতন ও বয়কটপন্থি মানুষ। খেতে গেলেন 'পাতাম রেস্টুরেন্টে', কোমল পানীয় পছন্দ করলে সেখানে ফান্টা, কোক আর স্পাইটের বাইরে কিছু নাই। আচ্ছা, এটা নাহয় এড়িয়ে গেলেন, পানি তো খেতে হবে নাকি?
ওয়েটার এনে দিবে 'কিনলে', ভিন্ন কোনো ব্রান্ড নেই।
ঠিক একই কাজ করে পেপসিকো কোম্পানি।
বঙ্গবন্ধু মিলিটারি জাদুঘরে খেতে গেলাম, পানি পানীয় যা খাবেন, সব পেপসিকোর। সুলতান ডাইন'সে শখ করে বিরিয়ানি খেতে গেলেন, ঘটনা সেইম টু সেইম। লেখার শুরুতে আমি যে অভিজ্ঞতাটি শেয়ার করেছি, সেখানেও একই কারবার।
There is no respect to the choice of consumers.
অধিকাংশ নামি-বেনামি খাবার দোকানের পলিসিই এমন। খেতে গেলে এসব দেখে খুব কষ্ট হয়।
ব্যক্তিগতভাবে আমরা বেশ কিছু প্রোডাক্ট নানা কারণে সাধ্যানুযায়ী বয়কট করি। কিন্তু রেস্টুরেন্টে খেতে গেলেই বিপত্তি ঘটে; আমাদের পছন্দ তথা ভালোমন্দ লাগার কোনো মূল্য থাকে না সেখানে। তারা যা দিবে তাই আমাদের কিনে খেতে হবে, রীতিমতো মগের মুল্লুক।
এক্ষেত্রে শুধু একটা পদক্ষেপই কার্যকর হতে পারে। এমন রেস্টুরেন্টগুলোতে খেতে ঢুকবেন, আপনার পছন্দের পানি আর পানীয় না দিলে সোজা বেরিয়ে আসবেন। অনুষ্ঠানের জন্য বড় অর্ডারের সাথে নিজেরে পছন্দের পানি ও পানীয়র শর্ত জুড়ে দিবেন।
শোনেন, টাকা দিয়েই যখন খাচ্ছেন, তখন নিজের পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারে ছাড় দিবেন না। লাগলে খাবো না বাইরে, তবুও আমার পছন্দে যাদের রেসপেক্ট নেই, তাদের প্রোডাক্ট আমরা ছুঁয়েও দেখব না।
ভোক্তার কোনো পছন্দ নেই!

১১ জুন, ২০২৪
বিশেষ দ্রষ্টব্য : মাসুম বিল্লাহ আরিফের ওয়াল থেকে লেখাটি সংগ্রহ করা।

https://www.facebook.com/100046361869466/posts/1042773660611353/?mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

বাবা

 বাবা // ( ২০১৪ বাবা দিবসে লিখা) //

আমি তখন একাদশ শ্রেণী, নটরডেম কলেজে পড়ি। বাবার সাথে নদীপথে লঞ্চে ঢাকায় আসা-যাওয়া করি। সে সময় শরীয়তপুর থেকে ঢাকার বাস চালু হয় নি। ছোট ছোট লঞ্চে করে প্রমত্তা পদ্মা-মেঘনা পাড়ি দিয়েই বাড়ি থেকে ঢাকায় আসতে হয়।

আমার বাবা লঞ্চে ঘুমানোর অসীম ক্ষমতার অধিকারী। লঞ্চ স্টার্ট করে মাত্র দুইশো মিটার না যেতেই বাবার নাক ডাকা শুরু হয়ে যায়। লঞ্চের ইঞ্জিনের সাথে সুর মিলিয়ে ডাকে। এই নাক ডাকা নিয়ে তার কোনরকম কোন অস্বস্তি ছিলো না। যত অস্বস্তি ছিলো আমার।

একদিন লঞ্চের ডেকে বসে আছি। পাশের বিছানায় একটা টুকটুকে মেয়ে। আমারই বয়সী। মাঝে মাঝে মেয়েটার সাথে চোখাচোখি হচ্ছে। বেশ লাগছে। মাথার মধ্যে হালকা করে ভ্রমর গুনগুন করতে শুরু করেছে। ভাবছি, আহা, এভাবেই বুঝি শুরু হয়! এমন সময় বাবা শুরু করলেন নাক ডাকা। ছি! এই মহা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাবা নাক ডাকার মত এমন একটা গর্হিত কাজ করতে পারলেন? মেয়েটা আমাকে কি ভাবছে? প্রেস্টিজ আর কিচ্ছু থাকলো না। হলো না। বাবাটাকে আর পাল্টানো গেলো না।

আরেকদিন পাশের একটি মেয়েকে ইমপ্রেস করতে হবে। সেজন্য মেয়েটিকে শুনিয়ে বন্ধুকে বললাম, জানিস, লঞ্চে উঠলেই আমি রবীন্দ্রনাথ হয়ে যাই। মনে হয় রবীন্দ্রনাথের মতো বজরায় ভাসছি। পদ্মার উপর ভেসে ভেসে কবিতা লিখছি। গুন গুন করে গানে সুর দিচ্ছি।

বন্ধু বিষয়টা বুঝতে পেয়ে মুচকি হেসে বললো, তাই নাকি! একেবারে রবীন্দ্রনাথ!

আমি বললাম, ঠিক তাই। আর একটু জোরের সাথে বললাম, জানিস, রবীন্দ্রনাথ আটলান্টিক মহাসাগরের একটা বাংলা নাম দিয়েছিলেন, অতলান্তিক। এখন আমার ইচ্ছে করছে বজরা নিয়ে সেই অতলান্তিকে চলে যাই।

মেয়েটি আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না। তার মানে আমাদের কথা ভালো করেই শুনছে। চাপাবাজি আরেকটু চালাতে পারলেই আমি সত্যি সত্যি রবীন্দ্রনাথ হয়ে যাব, আর মেয়েটি হবে মৃণালিনী। কাদম্বরী দেবী হলেও আপত্তি নেই।

ঠিক সেই সময়ে বাবা শুরু করলেন নাক ডাকা। ছিঃ ছিঃ, যার বাবা এমন করে নাক ডাকে, তার কপালে কি প্রেম আসে?

তবে লঞ্চের কেবিন ভাড়া করলে, এই সমস্যা নেই। কেবিনে শুয়ে বাবা যতই নাক ডাকুক, কোন তরুণীর কাছে আমার প্রেস্টিজ মাটি হবার সম্ভাবনা নেই।

আমাদের শরীয়তপুরের লঞ্চগুলো ছিলো খুবই ছোট। ট্রলারের চেয়ে একটু বড় হলেও হতে পারে। বরিশালের লঞ্চ যদি মেগা লঞ্চ হয়, তাহলে শরীয়তপুরের লঞ্চ মিনি লঞ্চও না, মাইক্রো লঞ্চ বলা যেতে পারে। প্রতি বর্ষায় মোটামুটি রুটিন করে কয়েকখানা মাইক্রো লঞ্চ নদীতে ডুবে যেত, আর সাংবাদিকরা মহাউৎসাহে সাধু ভাষায় লিখতো, ‘গতকল্য প্রমত্তা পদ্মায় আরও একখানা জাহাজের সলিল সমাধি হইয়াছে’।

একবার এক সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, এইসব মাছ ধরার নৌকার সাইজের লঞ্চগুলো ডুবে গেলে বুঝি জাহাজ হয়ে যায়?

সাংবাদিক সাহেব মাদারীপুরের লোক। তিনি মাদারীপুরের ভাষায় বললেন, ভাইডি, বেশী বুইঝো না। আমি কাগজের লোক, ডকুমেন্ট চেক করেই কথা বলি। ডুবে যাওয়া নৌকাটা খাতাপত্রে জাহাজ ক্যাটাগরিতেই রেজিস্ট্রেশন করা আছে। তাই লিখতে গেলে ঐটাকে জাহাজই লিখতে হবে। জাহাজখানার নাম ছিলো এম ভি দুর্বার।

দুর্বার হোক আর অনির্বার হোক, কিছুদিন পর পরই এগুলি রুটিন করে ডুবে যেত। এসব লঞ্চে যাত্রী কেবিন থাকত মাত্র দুই-তিনটা। সেই সাথে দুই বা তিনটা স্টাফ কেবিন। সারেং সাহেবের জন্য সারেং কেবিন। আনসারদের জন্য আনসার কেবিন। লঞ্চের স্টাফরা সুযোগমতো এসব কেবিন ভাড়া দিয়ে দিতো।

তো, সেবার কেবিনেই বাড়ি যাচ্ছি। আমি আর বাবা। কেবিনটায় আলো একেবারেই নেই। একটা মাত্র অতি ছোট্ট টিউব লাইট টিমটিম করছে। এটা মনে হয় আনসার কেবিন। আনসার কেবিনগুলোর ভাড়া একটু কম।

আমি তখন যেখানেই যাই, হাতে থাকত বই। হাতে বই থাকলে একটা পণ্ডিত পণ্ডিত ভাব আসে। তখন তো আর স্মার্টফোন ছিলো না। আমার মতো গোবেচারা ছেলে বই নিয়েই ভাব নিতো! কেবিনের ঐ অল্প আলোতেই বই খুলে বসলাম।

বাবা বললেন, এই আলোতে বই পড়া যাবে না। এমনিতেই তুমি চশমা পরো, চোখের বারোটা বাজবে – বই বন্ধ।
এই বয়সটাতেই ছেলেরা প্রথম বাবাকে তাদের প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করে। বাবাই যেন তার সব কিছুর বাধা। কেন বাবা তাকে সব কিছুতে বাধা দেন? কেন সে যা করতে চায় বাবা সব সময় তার উল্টোটা করতে বলেন? বাবাই তার স্বাধীনতার পথের কাঁটা। তবু মেনে নিতে হয়। আমিও মেনে নিলাম। বই বন্ধ করলাম।

একটু পরে বাবার চোখ বুজে গেলো। ভাবলাম – বাঁচা গেলো। আবার বইটা খুলে বসলাম। মিটমিট করে চোখের একেবারে সামনে নিয়ে বই পড়ছি। হঠাৎ বইটাতে একটা টান। আমার তো ভয়ে আত্মারাম খাঁচাছাড়া। বাবার কুম্ভকর্ণ ঘুম যে এখন ভাঙতে পারে, তা আমি কল্পনাও করিনি। বাবা কিন্তু কিচ্ছু বললেন না। ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট টর্চ বের করলেন। আমার বইয়ের উপর টর্চের আলো ফেলে বললেন, ‘এইবার পড়’। তিনি আলো ধরে আছেন-আমি পড়ছি। কি যন্ত্রণা! যেই লোকটার এতক্ষণে নাক ডাকার কথা, তিনি সেটা না করে আমার বইয়ের উপর টর্চ ধরে বসে আছেন।

আমি বললাম, টর্চটা আমাকে দিয়ে তুমি ঘুমাও।

তিনি দিলেন না। আসলে বাবা জানতেন, একটু পরেই আমি বই খুলে বসব। তাই তিনি আসলে ঘুমাননি। ঘুমানোর ভান করেছিলেন।

তখন বুঝিনি – পৃথিবীর সকল মানুষকেই তার নিজের চেয়ে পিতা অনেক বেশি চিনেন। আমার আমি তো আমার কৈশোর পার হবার পরের আমি। কিন্তু বাবার আমি আমার প্রথম চিৎকারের আমি। প্রথম হাঁটতে শিখার আমি। প্রথম কথা বলার আমি। আমার প্রথম মিথ্যে বলার সাক্ষী তিনি। তিনিই আমার প্রথম ভুল ধরে ফেলা পুলিশ। আমাকে শাস্তি দেয়া প্রথম বিচারক। আমাকে ভালো মানুষ করার প্রথম গুরু। বাবাই আমাদের প্রথম আইডল।

এক সময় আমি আর বাবা দুজনেই ঘুমিয়ে গেলাম। কিন্তু আমি তো লঞ্চে ঘুমাতে পারি না। একটু পরে ঘুম ভেঙে গেল। আবার বই বের করলাম।

টর্চের আলোতে পড়ছি। স্টিফেন হকিং-এর ‘ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’। হকিং সাহেব শুরু করেছেন – A well-known scientist (some say it was Bertrand Russell) once gave a public lecture on astronomy …. বিখ্যাত বিজ্ঞানী লেকচার দিচ্ছেন – পৃথিবী গোল, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। পেছন থেকে এক বৃদ্ধা উঠে বললো, যত্তো সব রাবিশ কথাবার্তা! পৃথিবী তো ফ্লাট – একটা বড় কচ্ছপের পিঠে বসে আছে। বিজ্ঞানী বললো, বেশ তাই সই – তাহলে কচ্ছপটা কিসের উপর দাঁড়িয়ে আছে? বৃদ্ধা রাগ করে শাসিয়ে উঠলো, আমার সাথে চালাকি করো না – সবার নিচে তো কচ্ছপটাই আছে – তার নিচে আবার কি আছে?

আমি পড়ছি আর হাসছি। ভাবছি আজ রাতেই পুরো ‘ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’ বইটা শেষ করে ফেলব – যদি ততক্ষণ টর্চের আলোটা থাকে।

হঠাৎ লঞ্চটা একটু জোরে দুলে ওঠলো। সময়ের সাথে সেই দুলুনি একটু একটু করে বাড়ছে। বাবার ঘুম ভেঙে গেলো। বাবা বুঝতে পারলেন, নদীতে ঝড় উঠছে।

তিনি লাফ দিয়ে কেবিনের দরজা খুলে ফেললেন। আমাকে বললেন, ফুল প্যান্ট খুলে ফেল, শর্টস পড়ে নে।
আমি তাই করলাম।

একটু পর আবার বললেন, জামা খুলে ফেল। লঞ্চ ডুবে গেলে সাঁতার দিতে হবে – গায়ে কিচ্ছু রাখার দরকার নেই – একেবারে হালকা হয়ে নে। কিন্তু আমি দেখলাম, বাবা এখনও ফুল প্যান্ট পরে আছেন – সাথে মাফলারও আছে। আমার গায়ের সব কিছু খুলে আমাকে একেবারে হাল্কা করছেন। কিন্তু নিজে যে সবকিছু পরে আছেন – সেটা তাঁর মনেই নেই।

লঞ্চের দুলুনি আরও বাড়ছে। মাঝে মাঝে একদিকে অনেকটা কাত হয়ে যাচ্ছে। বাবার চোখ উদভ্রান্ত। আমার দিকে তাকাচ্ছেন আর বিড়বিড়িয়ে যাচ্ছেন.. আর কি করা যায়, কি করা যায় ? হঠাৎ বলে উঠলেন, আরে লঞ্চে তো বয়া আছে – বয়া ধরে তো পানিতে ভেসে থাকা যায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। সবগুলো বয়া দখল হয়ে গেছে। কিন্তু বাবার তো লাগবেই – অন্তত একটা বয়ায় আমার জন্য এক ফোঁটা জায়গা তাকে করতেই হবে। বাবা ছুটছেন পাগলের মত। এদিক থেকে ওদিক। আমি কিছুতেই তাকে থামাতে পারছি না। লঞ্চটা একেকদিকে হেলে পড়ছে। তার মধ্যেই বাবা ছুটছেন। কিন্তু প্রতিটা বয়ার চারপাশে অনেক লোক। বাবা সামনে যেতেই পারছেন না।

আমি শুনছি তিনি কাকে যেন বলছেন – ‘ভাই, আমার কিচ্ছু লাগব না, তুমি এই ছেলেটারে বয়াটা একটু ধরতে দিও।’
আমার বুক ফেটে কান্না আসছিলো। একটু পরে লঞ্চ ডুবে গেলে আমি মারা যাব – সেটা আমার মনেই হচ্ছিলো না। শুধু কান্না আসছিল বাবাকে দেখে। আমাকে বাঁচাতে – শুধু আমাকেই বাঁচাতে – তিনি নিজেকে তুচ্ছ করে যেভাবে ছুটছেন!

অতি বড় দুঃসময় নাকি হঠাৎ করেই কেটে যায়। সেই রাতের ঝড়টাও যেন একসময় হঠাৎ করেই থেমে গেলো। কিন্তু সেই রাত আমাকে অনেক বড় করে তুললো – আমার বয়স অনেকটা বাড়িয়ে দিলো।

আমি বুঝলাম – আমার কিশোর বয়সের বাবা আমার প্রতিপক্ষ নয়। তিনিই আমার কচি বয়সের আশ্রয়, আমাকে সঠিক লাইনে রাখার কম্পাস। আমার সবচেয়ে ভালোবাসার জায়গা। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে আমাকে বাঁচাতে চায়, এমন মানুষ পৃথিবীতে মা-বাবা ছাড়া আর কেউ নেই। আমার মনে হলো – বাবার নাক ডাকার শব্দের চেয়ে পবিত্র শব্দ আমার জন্য আর নেই।

আমি এখন দেশ বিদেশে ঘুরি। মায়ের সাথেই ফোনে কথা বলি। বাবাকে দরকার ছাড়া ফোনও দেয়া হয় না।

বাবার নাক ডাকার মতো অতো পবিত্র শব্দ আমি কতদিন শুনি না। তবু আমি জানি – আমার সবচেয়ে বড় আশ্রয়টা আমার জন্য তাঁর ছায়া বিছিয়ে বসে আছেন বাংলাদেশের ছোট্ট এক গ্রামে।
আমি অনেক ভাগ্যবান যে – আমার একজন বাবা আছেন।

#সুজনদেবনাথ #sujandebnath#fathersday

# পৃথিবীর সকল বাবাকে অনিঃশেষ শ্রদ্ধা।

www.facebook.com/photo.php?fbid=10233771351762740&set=a.1583739990635&type=3&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

বল্টু

  ●বল্টু : আমার একটা সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার : কি..? বল্টু : যখন যার সাথে কথা বলি তাকে দেখতে পাইনা। ডাক্তার : কখন এরকম হয়..? বল্টু: যখন ফোনে ক...